খালেদার মুক্তির খবরে বিএনপিতে স্বস্তি

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দীর্ঘ ২ বছর একমাস ১৭ দিন বন্দি থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। আইনি লড়াই, আন্দোলন, কূটনৈতিক পর্যায়সহ নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করে শীর্ষ নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে সুবিধা করতে পারেনি দলটি। অবশেষে সরকারি ইচ্ছায় এই মুক্তি মেলায় দলটিতে উলস্নাস আছে। যেভাবেই হোক মুক্তি হওয়ায় জিয়া পরিবারসহ সন্তুষ্ট দলের প্রতিটি নেতাকর্মী। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমে জানানোর পরেই বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিতে শুরু করেন কখন মুক্ত হচ্ছেন শীর্ষ নেত্রী। করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় প্রকাশ্যে রাজপথের উলস্নাস না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা নানাভাবে নিজেদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে। বোন সেলিমা ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া দলের পক্ষে বিএনপি মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মুক্তি নেতাকর্মীদের জন্য সুসংবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘোষণা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভিড় করেন বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে জনসমাগম এড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও সেটি আমলেই নেননি দলের অনেকে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত রয়েছেন হাসপাতালের সামনে। তারা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তিতে তারা খুব আনন্দিত। এসময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নেত্রীর মুক্তি তাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ভিড় করলেও হাসপাতালের কর্মীরা বারবার তাদের স্থান ত্যাগ করতে বলছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাদের সরে যেতে বলছেন। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, কোনো ঝুঁকিই এখন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে বুধবার খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে পারেন এমন তথ্য জানতে পেরে হাসপাতালের সামনে থেকে বাড়ি ফিরে যান। এদিকে আইনমন্ত্রীর ঘোষণার পরে খালেদা জিয়া মুক্তির পর চিকিৎসাসহ করণীয় ঠিক করতে দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের নেতারা গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। শর্তসাপেক্ষে মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়াসহ পুরো বিষয়টি জানার পর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বলা যায়, যেভাবেই হোক চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগটা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তির এই ঘোষণায় নেতাকর্মীরা স্বস্তি বোধ করছেন। প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে খালেদা জিয়ার কারাভোগ শুরু হয়। প্রথম ১১ মাস ছিলেন পুরানো ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী 'নির্জন' এই কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কেবিন বস্নকে। সেখানে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। দীর্ঘ সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আইনি ও রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। কারাগারে যাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়ার ?মুক্তির দাবিতে বিএনপি গত দুই বছরে মানববন্ধন, প্রতীক গণঅনশন, গণঅবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল, গণসাক্ষরতা অভিযান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মসূচির পালন করলেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নেতা-কর্মীরা অনেকে আহত হয়েছেন, অনেকের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে। সর্বশেষ জিয়া পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।