সারাদেশে ১০ দিনের 'লকডাউন' আজ শুরু

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে সশস্ত্রবাহিনী। ছবিটি ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে তোলা -যাযাদি
সারাবিশ্বের পাশাপাশি দেশেও নিজের আধিপত্য বিস্তার করেই চলেছে নোভেল করোনাভাইরাস। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা। সংক্রমণ রুখতে সারাদেশে আজ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জরুরি কোনো কাজ ছাড়া যেন কেউ বাসা থেকে না বের হন। সরকার 'লকডাউন' ঘোষণা না করলেও এই সময়ে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা এসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছ থেকে। বিদেশফেরতসহ তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা ও সবার জন্য পালনীয় 'সামাজিক দূরত্ব' নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহায়তায় রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী। অবশ্য এর আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আলেম-ওলামারা মসজিদে যাতায়াতেও সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিনের জন্য দেশ কার্যত চলে যাবে 'লকডাউনে।' গত সোমবার (২৩ মার্চ) বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যা ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর হবে। এসময় সবাইকে যার যার মতো করে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়। এ আদেশ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। এসময় আরও জানানো হয়, খাদ্য সরবরাহ, ব্যাংকিং কার্যক্রম, ফার্মেসি ও হাসপাতালসহ জরুরি সেবা এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ব্রিফিংয়ে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সকালে ভিডিও বার্তায় যুক্ত হন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহণ লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহণ এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহণ করা যাবে না। ওইদিন ?দুপুরের দিকেই নৌরুটে চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডবিস্নউটিসি) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিস্নউটিএ) কাছ থেকে। জানানো হয়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি, আরিচা-নগরবাড়িসহ সব নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার থেকেই। যদিও ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পানে ছুটেছেন কর্মমুখী মানুষ। একই দিন রেলপথবিষয়কমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সংবাদ সম্মেলন করে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এদিন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশের আদালতের কার্যক্রমও বন্ধ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা ও এর বিস্তার রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ধারাবাহিকতায় আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগ ও সব অধস্তন আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। মঙ্গলবার সাতটি পোশাক কারখানাও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, 'শ্রম আইনের সব বিধিমালা অনুসরণ করে আমাদের সাতটি কারখানার মালিকরা নিজেরাই ছুটি ঘোষণা করেছি।' এদিকে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর অনেকেই তড়িঘড়ি করে ঢাকা ছেড়েছেন। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এই সাধারণ ছুটি যে অন্য সময়ের সাধারণ ছুটির মতো নয়, সে বিষয়টিই মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সরকারে নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে বাসায় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিষ্কার বলতে চাই, এই ছুটি উৎসব করার জন্য নয়, করোনা প্রতিরোধের জন্য। এটি কোনো উৎসবের জন্য দেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মূলমন্ত্র যার যার ঘরে থাকুন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করুন। তার জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি। এর মানে হচ্ছে এই ছুটির মধ্যে সবাই বাসায় থাকবেন। এদিকে মসজিদে মুসলিস্নদের উপস্থিতি সীমিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন আলেম-ওলামারা। মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এক বৈঠকে আলেম-ওলামরা এমন মত দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা সায়লা শারমিন। করোনার বিস্তার রোধে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। সময়ে সময়ে সরকার যে নির্দেশনা দিচ্ছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। এরই মধ্যে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও খাদ্যপণ্যের সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে, সেদিকেও মনোযোগ রয়েছে সরকারের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র তথ্য অফিসার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বকসীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে টিসিবি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।