২৫ মাস পর খালেদার মুক্তি

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তির পর বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরেন -ফোকাস বাংলা
দুর্নীতির দায়ে ২৫ মাস সাজা ভোগের পর 'মানবিক বিবেচনায়' সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর ভিড় আর স্স্নোগানের মধ্যে গুলশানের ভাড়া বাড়ি ফিরোজায় পৌঁছান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার পরনে ছিল 'ট্রেডমার্ক' হয়ে ওঠা গোলাপি শাড়ি, চোখে সানগস্নাস, আর মুখে মাস্ক। ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার নিজে গাড়ি চালিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমাও ছিলেন ওই গাড়িতে। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এমন এক সময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হলো, যখন নভেল করোনাভাইরাসের মহামারিতে পুরো বিশ্বজুড়ে চলছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা; নানা বিধিনিষেধে বাংলাদেশও রয়েছে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায়। বিএনপি নেতারা এতদিন খালেদার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে এলেও মহামারির মধ্যে এমন পরিস্থিতি তার মুক্তি নিয়ে এখন তাদের মনে শঙ্কাও কাজ করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার বলেছিলেন, 'আমরা কিছুটা আবেগ-আপস্নুত তো বটেই, কিছুটা স্বস্তিও বোধ করছি। আবার কিছুটা আতঙ্কিতবোধ করছি এই ভয়ঙ্কর সময়ে তার এই মুক্তি তার কোনো ক্ষতি না ঘটে।' ৭ বিএনপি নেত্রীর দন্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে মুক্তির আদেশের নথি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের হাত ঘুরে বুধবার বিকাল ৩টার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পৌঁছায়। এরপর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক বলেন, 'উনাকে আমরা ৩টার দিকে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দিয়েছি। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে উনি সোয়া ৪টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।' বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে খালেদাকে তার গুলশানের বাসা 'ফিরোজায়' নিয়ে যেতে আগেই হাসপাতালের বাইরে এনে রাখা হয় গাড়ি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কেবিন বস্নকে খালেদার মুক্তির অনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন একটি হুইলচেয়ার নিয়ে যাওয়া হয় ছয় তলার ৬২১ নম্বর কক্ষে। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ও জমায়েত না করার বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ারির পরও বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করলে পরিস্থিতি কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে। পুলিশ ও বিএনপি মহাসচিবকে হ্যান্ডমাইকে বারবার নেতাকর্মীদের হাসপাতাল চত্বর থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। খালেদার জামিনের জন্য আইনজীবীরা গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেলেও জামিন মঞ্জুর হচ্ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে তার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার খবর আসে। তার তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সরকার নির্বাহী আদেশে দন্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্ত হলো- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার শুধু বলেন, 'খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দন্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।' আইন মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবারেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। এরপর বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নথি যায় গণভবনে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজেও সকালে গণভবনে যান। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বুধবার নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে। মন্ত্রণালয় তখন খালেদার মুক্তির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কারাগারে পাঠায়। এরপর খালেদা জিয়ার মুক্তির কাগজ নিয়ে একজন কারা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান।