জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

মানুষকে রক্ষা করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এ নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।'

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন -ফোকাস বাংলা
বিশ্বে মহামারি আকার ধারণা করা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষায় সরকার এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি এবং তাতে জনগণকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত।' 'ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়-সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।' সারাবিশ্বে মহামারি রূপ নেওয়া কোভিড-১৯ রোগে ইতোমধ্যে বিশ্বে ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্য ঘটেছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণ ঘটেছে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের, মারা গেছেন পাঁচজন, আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জন। করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে; এবার স্বাধীনতা দিবসের প্রায় সব অনুষ্ঠানই বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এ পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।' 'এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।' বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে অতি সংক্রামক এই ব্যাধি বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে কী পরিণতি ঘটবে-তা নিয়ে সবার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। জনসমাগমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এসেছিল আগেই। আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সোমবার সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করে। এরপর মঙ্গলবার সড়ক, নৌ ও আকাশপথে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধের ঘোষণা এলে ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশও বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো কার্যত অবরুদ্ধ দশার মধ্যে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের আত্মীয়স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তারাও নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি সকলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি।' 'কিন্তু এই সংকটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।' ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলা এবং যতদূর সম্ভব, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন সরকার প্রধান। যারা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা 'অক্ষরে অক্ষরে' মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। 'মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন,' বলেন শেখ হাসিনা। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও দেন তিনি। >> ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিসু্য পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলা যাবে না। >> করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকতে হবে। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। >> বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকতে হবে। মুসলমানদের নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ঘরে বসে প্রার্থনা করতে হবে। >> করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর এবং সোসাইটি অব ডক্টরসের ৫০০টি নম্বরে ফোন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'করোনাভাইরাস দ্রম্নত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন।' 'তবে, আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে।' এই কারণে পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। সব সময় খেয়াল রাখুন আপনি, আপনার পরিবারের সদস্যগণ এবং আপনার প্রতিবেশিরা যেন সংক্রমিত না হন।' 'আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।'