দেশে আরও ৫ জন আক্রান্ত, মোট ৪৪

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস
বাংলাদেশে নতুন করে পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউট বা আইইডিসিআরের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট ৪৪ জন শনাক্ত হলেন। আইইডিসিআর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, নতুন শনাক্তরা সবাই পুরুষ এবং তাদের একজনের অন্যান্য রোগ রয়েছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে একজন বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তিনজন বিদেশ থেকে আগতদের সংস্পর্শে এসেছিলেন আর বাকি একজনের ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে বলে তিনি জানান। নতুন রোগীদের মধ্যে ৩০-৪০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে দুইজন এবং একজন ষাটোর্ধ্ব। তিনি বলেন, এর আগে আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জন সুস্থ হয়েছেন। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস \হশনাক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। এরপর ১৮ মার্চ প্রথম ব্যক্তির মৃতু্যর কথা জানায় আইইডিসিআর। বুধবার প্রথম সংস্থাটি জানায়, ঢাকায় সীমিত আকারে কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে বলে তারা সন্দেহ করছে। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এতদিন শুধু বিদেশ থেকে যারা আসছিলেন, তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল, তবে এখন থেকে তারা আরও বিস্তৃত উপায়ে নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করবেন। আইইডিসিআর ছাড়াও পরীক্ষা প্রসারিত করা হয়েছে বলছেন সেব্রিনা ফ্লোরা। 'একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামের বিআইটিআইতে এই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে খুব শিগগিরই।' মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআর ছাড়া জেলাপর্যায়ে হটলাইন নম্বর দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক। এর আগে বিদেশ থেকে এসেছেন এমন মানুষের সংস্পর্শে ছিলেন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন- এমন মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছিলেন বলে জানিয়েছেন। এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে, এখন সময় কমানোর লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 'আমাদের টিম হাসপাতালে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসত, এখন হাসপাতাল নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাবে।' এক নজরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস : (২৬ মার্চ পর্যন্ত) ২৬ মার্চ নতুন করে শনাক্ত হয়েছে পাঁচজন মোট করোনাভাইরাস শনাক্ত ৪৪ জন ২৪ ঘণ্টায় ১২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা সর্বমোট পরীক্ষার সংখ্যা ৯২০ মোট সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। করোনাভাইরাসের পরীক্ষার কেন্দ্র আরও বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে সরকার। ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতালসহ ঢাকার বাইরের কয়েকটি হাসপাতালে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। আইইডিসিআরের যোগাযোগের জন্য ০১৯৪৪৩৩৩২২২ অথবা ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে হান্টিং নম্বরের মাধ্যমে অন্যান্য নম্বরে টেলিফোনটি চলে যাবে। এ ছাড়া ১৬২৬৩ নম্বরেও যোগাযোগ করা যাবে। তিনি আবারও স্বাস্থ্য সতর্কতার বিষয়গুলো মেনে চলার অনুরোধ করেন। খাগড়াছড়িতে আইসোলেশনে থাকা যুবকের মৃতু্য এদিকে কোভিড-১৯ রোগের মতো উপসর্গ নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা এক যুবকের মৃতু্য ঘটেছে। বুধবার রাতে ওই যুবকের মৃতু্যর পর হাসপাতালে তার সংস্পর্শে আসা দুইজন চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই যুবকের বয়স ৩০ বছর। খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ির নুনছড়ি গ্রামে তার বাড়ি। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নুপুর কান্তি দাশ সাংবাদিকদের বলেন, ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আগেও হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মিটন চাকমা জানান, বুধবার দুপুরে অসুস্থ যুবককে হাসপাতালে আনা হলে তাকে 'করোনা আইসোলেশনে' রাখা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে তার মৃতু্য ঘটে। আইইডিসিআরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে খাগড়াছড়ির চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পূর্ণ জীবন চাকমা বলেন, মৃত ব্যক্তির রক্তের নমুনা রাখা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য তা আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। লাশটি সৎকারের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডা. পূর্ণ জীবন বলেন, 'রোগীর সংস্পর্শে আসা দুইজন চিকিৎসক, দুইজন নার্স ও একজন আয়াকে হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। মৃত রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তারা কোয়ারেন্টিনেই থাকবেন।' আইইডিসিআর নমুনা নিল ইতালিফেরত যুবকের শরীয়তপুরে নড়িয়ায় ইতালিফেরত এক যুবক ও তার স্ত্রীর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়েছে আইইডিসিআর। নড়িয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজিব হাওলাদার জানান, জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা থাকায় আইইডিসিআর থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এসে এই দুইজনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এই দম্পতিকে নজরদারিতে রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চামটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাঢ়ি জানান, গত ১৩ মার্চ ইতালি থেকে বাড়ি আসেন ইতালিপ্রবাসী এই যুবক (৪৫)। বাড়ি আসার পর তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এ অবস্থায় ২২ মার্চ তার ও তার স্ত্রীর (৩২) জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা শুরু হয়। নিজাম উদ্দিন বলেন, তখন ওই যুবক আইইডিসিআরের নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। ওই সময় আইইডিসিআরের ডা. রাব্বানী মাদারীপুরের শিবচর অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখান থেকে তার টিমের লোকজন নিয়ে ২৪ মার্চ বেলা ১১টায় ওই গ্রামে ছুটে যান এবং এই দম্পতির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা মহাখালীতে পরীক্ষারে জন্য নিয়ে যান।