৪৯ বছর পর ভিন্ন এক স্বাধীনতা দিবস

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বিশেষ সংবাদদাতা
মহান স্বাধীনতা দিবসে শহিদ স্মরণে ফুলে ফুলে ভরে ওঠার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে কর্মসূচি বাতিলে এভাবেই জনশূন্য ছিল সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ -যাযাদি
করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে অন্যরকম এক স্বাধীনতা দিবস পার করল বাঙালি জাতি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছিল না কোনো তোপধ্বনি। ছিল না জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণের দীর্ঘ আয়োজন। বাংলাদেশের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস কাটল আতঙ্ক-অস্থিরতা আর আয়োজনহীনভাবে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রস্তুতি, পরিকল্পনা বা আনন্দ আয়োজন ছিল না এবারের স্বাধীনতা দিবসে। দিবসটি উদযাপনে বাঙালিদের যে প্রাণস্পন্দন লক্ষ করা যেত করোনাভাইরাসের সীমাহীন প্রতিবন্ধকতায় সেটা চাপা পড়ে গেছে। এবারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণবেদি অর্থাৎ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রস্তুতি বা প্রতিযোগিতা ছিল না। এমনকি কোনো আলোচনা সভা বা সেমিনারও হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়নি। সশস্ত্র বাহিনী বা অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কর্মসূচিও পালিত হয়নি। বাসাবাড়ির ছাদে বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওড়েনি জাতীয় পতাকা। ব্যক্তিগত গাড়ি বা গণপরিবহণে উড়তে দেখা যায়নি লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে যেসব ভবন বা যেসব স্থানে লাল-সবুজের আলোকসজ্জা করা হয়েছিল খাঁ-খাঁ নগরীতে শুধু সেগুলোর আলোকচ্ছটা লক্ষ করা গেছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এমনভাবে আর কোনো স্বাধীনতা দিবস কাটায়নি বাঙালি জাতি। করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে অনেক আগেই সরকার সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় গণপরিবহণ। জরুরি সেবা সংস্থা ও মিডিয়া ছাড়া অন্যান্য পেশার নাগরিকদের এ সময়ে ঘরে থাকার জোরাল নির্দেশনা দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে নামানো হয। মানুষের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আসতে শুরু করে। এরপর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশ কার্যত অচল হয়ে যায়। ফলে বাঙালির প্রাণের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ আর উত্তাপ হারিয়ে যায় করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝে। বাঙালির জাতীয় জীবনে সার্বজনীন উৎসবের একটি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে এ দিবসটি পালন করে আসছিল। দিবসটিকে ঘিরে বাঙালিদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করত। নানা আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ত পুরো জাতি-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু ২০২০ সালের এই স্বাধীনতা দিবস যখন দোরগোড়ায় তখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বাঙালিদের এ আনন্দ আয়োজনকে আতঙ্কের অস্বাভাবিক গতিতে আটকে দিল। এ এক অন্যরকম আতঙ্ক। অন্যরকম অস্থিরতা। অসহায়ত্ত গ্রাস করছে প্রতিটি মানুষকে। একটি মাত্র ভাইরাস মানুষের কাছ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। সমাজ হয়ে উঠছে আত্মকেন্দ্রিক। কেড়ে নিয়েছে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের সব আনন্দ। জাতীয় দিবসকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক প্রস্তুতিও প্রতিবন্ধকতার ঘেরাটোপে বন্দি ছিল। আনন্দ আয়োজন বা সামান্যতম আন্তরিকতার অনুষঙ্গ থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়ে চলেছে। ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে সময়। আতঙ্ক গ্রাস করছে আনন্দকে। এখন শুধু সতর্কতা ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে নিজেকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা আর মহাশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কৃপাদৃষ্টির অপেক্ষার পালা।