নিউইয়র্কে ৪ বাংলাদেশির মৃতু্য

যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়াল

যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড ১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি নিয়ে চিকিৎসকরা হাহাকার করছেন

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার একদিনেই দেশটিতে ১৮ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যাও এক হাজার ৬০০ পেরিয়ে গেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের কারণে মুখোমুখি হওয়া ক্ষতির হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে টেনে তুলতে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা বিলে শুক্রবারই স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হলো। এই প্রণোদনা করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও মার্কিন শ্রমিকদের স্বস্তি দেবে বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন। দেশটিতে কোভিড ১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি নিয়ে চিকিৎসকরা হাহাকার করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্রাম্প তার জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে জেনারেল মোটরসকে ভেন্টিলেটর উৎপাদনে লাগিয়ে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ২ এ অটোমেকার কোম্পানি দরকষাকষির নামে 'সময় অপচয়' করছিল বলে প্রেসিডেন্ট অভিযোগও করেছেন। মার্কিন কোম্পানিগুলোকে চিকিৎসা উপকরণ বানাতে বাধ্য করতে ট্রাম্পের ওপর কোরীয় যুদ্ধের সময়কার প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন সচল করার চাপ ছিল; যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার বদলে কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছা সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছিলেন। নিউইয়র্ক সিটি, নিউ অরলিয়ন্স, ডেট্রয়েটসহ বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালগুলো এখন কোভিড-১৯ রোগীদের ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণ সংকটে ভুগছে। দেশটিতে শুক্রবার পর্যন্ত এক লাখ তিন হাজারের বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যাও ছয় লাখ ছুঁইছুঁই; মৃতের সংখ্যা পেরিয়েছে ২৭ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাপিয়ে গেছে ইতালিও। ইউরোপের এ দেশটিতে করোনভাইরাস ৯ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যকই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। হাসপাতালের পাশাপাশি বেকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নগদ অর্থ সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্যাকেজ শুক্রবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে পাস হয়। কয়েকদিনের আলোচনা শেষে বুধবার দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের এ বিলটি সিনেটে অনুমোদিত হয়েছিল। নিম্নকক্ষে পাসের পরপরই এটি ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য হোয়াইট হাউসে যায়। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের সময় সেখানে রিপাবলিকান দলের শীর্ষ আইনপ্রণেতারা ছিলেন। নিউইয়র্কে ৪ বাংলাদেশির মৃতু্য : এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন। সেখানকার একটি হাসপাতাল তাদের মৃতু্যর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারকে সেখানে ভর্তি না করে নিজের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এ নিয়ে নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ১২ জন বাংলাদেশি মারা গেলেন। একেএম মনির উদ্দিন নামের ৬৩ বছরের একজন ক্যাব চালক ২৭ মার্চ মারা যান। একই দিন সফিউদ্দিন বেপারী নামের ৫৮ বছরের আরেক ব্যক্তি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার মারা গেছেন ৭৭ বছরের ব্রংক্স এলাকার এক ব্যক্তি। বুধবার মারা গেছেন ব্রম্নকলিন এলাকার ৪৫ বছরের মোছাম্মদ আক্তদারি। মৃত মনির উদ্দিনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক স্বজন সাপ্তাহিক বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জানান, গত ৫ দিন তিনি এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার কুইন্সের এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হলুদ ক্যাব চালিয়ে তিনি জীবনধারণ করতেন। ঢাকার মনির একই সঙ্গে নিউইয়র্কের একটি মসজিদে স্বেচ্ছায় মুয়াজ্জিন হিসেবেও দায়িত্বপালন করতেন। বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, সফিউদ্দিন এলমাস্ট হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি কুইন্সে বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার তার ছেলে মারা গেছে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে। ৭৭ বছরের যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তার এক স্বজন ও কমিউনিটি কর্মী রাজীব আহসান বলেন, তিনি মন্টিফেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ব্যক্তির পরিবারের আরও ৫ জন সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে। হাসপাতাল থেকে মৃতের পরিবারকে বাসায় পাঠানো হয়েছে। মন্টিফেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমাদের হাসপাতালে নতুন রোগীর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদেরই কেবল হাসপাতালে আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া নিজের বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ যেন এই সংক্রামক রোগের বাহক না হয়ে যান। শরীরের নিজেরই এই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে। বোর্ড অব ইলেকশনের সদস্য মাজেদা আক্তার বলেন, ব্রম্নকলিনের বাসিন্দা মোছাম্মদ আক্তদারি নগরীর ব্রম্নকডেল হাসপাতালে মারা যান। তিনি কোনো কাজ করতেন না। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, তার পরিবারও আক্রান্ত হতে পারে। তাই তাদের নিজের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ২৪ মার্চ চারজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ। তাদের মধ্যে ৬০ বছরের আবদুল বাতেন, ৭০ বছরের নুরজাহান বেগম, ৪২ বছরের এক বাংলাদেশি প্রবাসী নারী এবং ৫৯ বছরের এ টি এম সালাম। ২৩ মার্চ মারা গেছেন ৩৮ বছরের আমিনা ইন্দ্রালিব তৃষা এবং ৬৯ বছরের মোহাম্মদ ইসমত। আগের সপ্তাহে মারা গেছেন মোতাহের হোসেন ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজন বাংলাদেশি।