সংক্রমণের ঝুঁকি কমাবে টেলি-মেডিসিন সেবা

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
টেলি-মেডিসিন তথা অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরে অবস্থানরত রোগীদের চিকিৎসার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণ রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাই জনবহুল বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পদ্ধতিটি চালু করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে আলোচিত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আতঙ্কে অবরুদ্ধ দেশে আকস্মিকভাবে প্রায় সব কিছুই বন্ধ হয়ে আছে। রোগটির সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সরকারিভাবে মানুষকে বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দিয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এত কিছুর পরও প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাই সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানো ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় দূরের রোগীদের সেবায় টেলি-মেডিসিনব্যবস্থা সব ধরনের রোগের প্রার্দুভাব কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে মহামারি হিসেবে স্বীকৃত করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে এটি চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেছেন, বৈশ্বিক যোগাযোগব্যবস্থার ফলে অনেক আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়েছ। এতে করে দেশের অধিকাংশ সেবা খাতেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির প্রাধান্য রয়েছে। এমনকি অনেক বেসরকারি-হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসকের সিরিয়াল পেতেও অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং জনগণের চিকিৎসাসেবার মতো মৌলিক অধিকার পূরণে সব হাসতপাতালে ই ট্রিটমেন্ট তথা টেলি-মেডিসিনসেবা চালু করা হলে করোনাভাইরাস মোকাবিলা অনেকটা সহজ হবে। এ ব্যাপারে রাজধানীর ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোমিনুল হক বাধন যায়যায়দিনকে বলেন, সাধারণত চোখের ডাক্তাররা রোগীর খুব কাছে গিয়ে সেবা দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে রোগীর চোখ স্পর্শ করে রোগ শনাক্ত করতে হয়। অন্যদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের উপসর্গগুলোর মধ্যে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা অন্যতম লক্ষণ। এমনকি করোনা আক্রান্ত হয়ে চীনে প্রথম যে চিকিৎসক মারা যান, তিনি একজন চোখের ডাক্তার ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে খালি হাতে চোখ, কান, নাক ও মুখের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে নিষেধ করেছে। তাই সংক্রমণ ঝুঁকি হ্রাসে তিনি নিজ উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথা ফেসবুকে পেজ খুলে অনলাইন পদ্ধতিতে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। চোখের সেবা নামক পেজটিতে প্রতিদিন অসংখ্য চোখের রোগী ফোনকল ও ম্যাসেঞ্জার কমেন্টস করে, ক্ষতিগ্রস্ত চোখের ছবি পাঠিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ নিচ্ছেন। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবুল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব মোকাবিলায় মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সরকারিভাবেও এমন নির্দেশনা (লকডাউন) দেয়া হয়েছে। তবে সাধারণ রোগীরা যেন বাড়িতে বসে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন। এ জন্য তাদের হাসপাতালের মেডিসিন, শিশু, নাক-কান গলা ও গাইনি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একটি দল প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কাছে থাকা ১৪ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে সাধরণ রোগীরা ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে টেলি-মেডিসিন সেবা নিতে পারবেন। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি শিগগিরই ফেসবুক পেজ ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে রোগীদের সেবা শুরু করা হবে। কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক যায়যায়দিনকে বলেন, তারা সর্দি, কাশি, জ্বর এবং গলা ব্যথ্যার মতো সাধারণ রোগীদের মোবাইল ফোনে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এতে করে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামান্য জ্বর এবং সর্দি-কাশির সমস্যা নিয়ে মেডিকেলে না এসে বাড়িতে বসে টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে অনেকেই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শাফি যায়যায়দিনকে বলেন, স্বাস্থ্য বাতায়নে দেয়া ১৬২৬৩ নম্বর ও আইইডিসিআর ওয়েবসাইটে দেয়া ১৭টি মোবাইল নম্বরে ২৪ ঘণ্টা রোগীদের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত টেলি মেডিসিন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি অনসুরণ করে সাম্প্রতিক সময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগীদের টেলি মেডিসিন সেবা দিতে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে রোগীরা যেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন, সে জন্য চিকিৎসকদের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাই স্বাস্থ্যসেবা খাত-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ, চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা-জেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত টেলি মেডিসিন সেবা চালু করা বলে তিনি মন্তব্য করেন। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভিডিও কনফারেন্স পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি দূরবর্তী যোগাযোগ এবং কোভিড-১৯ শনাক্তে কার্যকর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেংজুন বলেন, কোভিড-১৯ আক্রমণ থেকে তাদের কর্মীদের রক্ষা করতে ইতোমধ্যেই কঠিন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় হুয়াওয়ে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে। তাদের ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেমটি ফোর-কে ভিডিও প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান দিতে সক্ষম। এর সাহায্যে করোনাভাইরাসের মতো মহামারির প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। দূর থেকে পর্যবেক্ষণ এবং কার্যকর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থান থেকে স্বাস্থ্য পরামর্শও দেয়া যাবে।