করোনার আতঙ্ক-আকুতি পেছনে ফেলে মারা গেলেন মানুষটি

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রচন্ড জ্বরে অচেতন, হাসপাতালে নেওয়ার ডাকে প্রতিবেশীদের সাড়া না দেওয়া, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাতভর স্ত্রীর চেষ্টা, একের পর এক হটলাইনে ফোন করে বিফল- সবকিছুকে পেছনে ফেলে মারা গেলেন বগুড়ার শিবগঞ্জের এক ব্যক্তি। গাজীপুর থেকে বাড়িতে ফিরে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে পড়েন তিনি। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন, এমন আতঙ্কে কেউ তার পরিবারের আকুতিতে সাড়া দেননি। শুক্রবার রাতে ওই ব্যক্তির অবস্থার অবনতি হয়। অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্ত্রী পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেউ এগিয়ে আসেননি। এরপর স্ত্রী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশে। কিন্তু সারা রাতে কোথাও থেকে তিনি কোনো সাড়া পাননি। সারা রাত এভাবেই কাটে। শনিবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির তার মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেন। শিবগঞ্জের ইউএনও বলেন, একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে ওই ব্যক্তির বাড়িতে পাঠানো হলে তিনি তার মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেন। ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) খবর দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির পরিবার কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এ ছাড়া আশপাশের ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি লকডাউন থাকবে। গাজীপুর থেকে বাড়িতে ফিরে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে পড়েন বগুড়ার শিবগঞ্জের এক ব্যক্তি। শুক্রবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হয়। অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্ত্রী প্রথমে পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেউ এগিয়ে আসেননি। এরপর স্ত্রী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশে। কিন্তু সারা রাতে কোথাও থেকে তিনি কোনো সাড়া পাননি। ওই নারী সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, তার স্বামী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার একটি মুদি দোকানে কাজ করেন। গত মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে ফেরেন। পরের দিন তার প্রচন্ড জ্বর আসে। শুরু হয় সর্দি-কাশি। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে জ্বরের ওষুধ সেবন করছিলেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার রাতে অবস্থার চরম অবনতি হয়। বাড়িতে আট বছরের মেয়ে ছাড়া তার সঙ্গে আর কেউ নেই। শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে তার স্বামী প্রচন্ড জ্বরে একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। দিশেহারা হয়ে প্রথমে তিনি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দেন। কিন্তু জ্বরের রোগী শোনার পর কেউ আসতে রাজি হননি। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পাড়া-প্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের সহযোগিতা চান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে কেউ কাছে আসতে রাজি হননি। এরপর তিনি একে একে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, শিবগঞ্জ থানার পুলিশ, শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন সহযোগিতার জন্য। কোনো সাড়া না পেয়ে আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন দেন। কিন্তু লাইন পাননি। পরে ফোন দেন শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে। শনিবার হটলাইনে বিষয়টি জানার পর শেষে এগিয়ে আসেন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন। তিনি বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীকে জানান। পরে সিভিল সার্জন একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে ওই ব্যক্তির বাড়িতে পাঠান। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন বলেন, 'হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করা নারীর বর্ণনা শুনে মনে হলো, মানবতার কাছে আমরা হেরে গেছি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোক বা না হোক, একজন নাগরিক হিসেবে তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা কেউ তার পাশে দাঁড়াতে পারিনি। আমি নিজেও সকাল থেকে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগের দীর্ঘ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষে সিভিল সার্জন ও পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।' সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী বেলা ১১টার দিকে বলেন, ওই ব্যক্তির বাড়িতে একজনকে পাঠানো হয়েছে। পরে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যাওয়া চিকিৎসা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, ওই ব্যক্তি আর বেঁচে নেই। \হ