বাজারে সরবরাহ কমিয়ে চালের কৃত্রিম সংকট!

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে বেড়ে গেছে চালের দাম। ছবিটি রোববার যাত্রাবাড়ী আড়ত থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ক কাজে লাগিয়ে বড় ব্যবসায়ীরা এই সংকট তৈরি করেছেন। এতে করে রাজধানীতে মোটা ও চিকন-সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮-১০ টাকা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে শ্রমিক ও পরিবহণ কমে যাওয়ায় রাজধানীতে পর্যাপ্ত চাল পাঠানো যাচ্ছে না। রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চালের সরবরাহ কমিয়ে সংকট তৈরি করেছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার সুযোগে তারা দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৮ টাকা দরে। একই মানের নাজিরশাইলও কেজিপ্রতি একই দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে এই দুই ধরনের চাল বিক্রি হতো ৫৪-৫৮ টাকা কেজি দরে। সরু চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে গরিবের মোটা চালেরও। পাইজাম ও লতা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪২-৪৮ টাকা কেজি। আর স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়, যা আগে ছিল কেজিপ্রতি ৩২-৩৫ টাকা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, দেশের কোথাও চালের সংকট নেই। এরপরও দোকানে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বেশি দাম চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি অভিযান ও বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা করার পর বাজারে চালের সংকট বেড়েছে। তারা বলছেন, জেল-জরিমানায় ক্ষুব্ধ হয়ে বড় বড় ব্যবসায়ী মোকাম থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বাজারের চাল ব্যবসায়ী এমএ গনি বলেন, 'নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর ও কুষ্টিয়া থেকে চাল সেভাবে আসছে না। যা আসছে তারও দাম বেশি। তাই বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে আমাদের।' একই বক্তব্য মালিবাগ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সোনালী ট্রেডার্সের মালিক এরফান আলী তালুকদারের। তিনি বলেন, 'দেশের চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায়। এই দুই মোকাম থেকে চাল আসা কমে গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে রাজধানীর চালের বাজারে। গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে নওগাঁ ও কুষ্টিয়া থেকে চালের স্বাভাবিক সরবরাহ আসছে না। এ কারণে রাজধানীতে চালের দাম বেড়েছে।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, 'চালের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা হয়ত কমেছে। এর প্রধান কারণ, লোকবলের অভাবে মিল চালাতে পারছি না। ট্রাকের অভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাল পাঠাতেও পারছি না। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা মিল ছেড়ে বাড়ি চলে গেছেন। আর যারা আছেন, তারাও ঘরের বাইরে আসছেন না।' সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কীভাবে প্রশ্ন তুলে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, 'করোনার আতঙ্কে আপনি-আমি যেভাবে নিজেকে সেফে রাখার চেষ্টা করছি, একইভাবে একজন শ্রমিকও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সেফে থাকছেন।' এখানে কোনো কারসাজি নেই দাবি করে লায়েক আলী বলেন, 'এটি বৈশ্বিক সমস্যা, তা বুঝতে হবে। সবসময় আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো ঠিক নয়।' বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রশিদও অভিন্ন দাবি করেন। তিনি বলেন, 'আমরা চালের দাম বাড়াইনি। পরিবহণ ও শ্রমিক সংকটের কারণে চাল বাজারে ছাড়তে পারছি না। কুষ্টিয়া থেকে কোনো ট্রাক রাজধানীতে যেতে চাইছে না। যেতে চাইলেও বেশি ভাড়া চাইছে। ট্রাক পেলেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এর বাইরে রাস্তায় পুলিশের হয়রানি তো রয়েছেই।' করোনা আতঙ্কে সারা বিশ্ব যখন থমকে গেছে, সেখানে কিছু সমস্যা তো হতেই পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জানতে চাইলে বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, 'করোনার কারণে মোকামগুলো থেকে চাল আনার জন্য ট্রাকচালক ও হেলপার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাজধানীতে চালের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে চালের কোনো সংকট নেই। চালের মজুদও সন্তোষজনক।' এই সংকট থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, 'চালের কোথাও কোনো সংকট নেই। নতুন ধানও উঠবে কয়েকদিন পর।' কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।