প্রাথমিকের ক্লাসও টিভিতে

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
টিভিতে পাঠদান করছেন শিক্ষিকা -ফাইল ছবি
করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঈদ পর্যন্ত বাড়তে পারে এ ছুটি। এ লম্বা সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সংসদ টিভির মাধ্যমে রেকর্ডিং ক্লাস চলছে। একই উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিকের মতো টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস প্রচার হবে। তবে প্রাথমিকে কনটেন্টে একটু ব্যতিক্রম থাকছে। চলতি সপ্তাহ থেকে এ ক্লাস সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমে প্রচার হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ইতোমধ্যে সব শিশুর মায়ের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। যেহেতু শিক্ষা ছুটি দীর্ঘায়িত হতে পারে তাই তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস প্রচার করা হবে। সেটা বার্ষিক পরীক্ষার মূল নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিহউলস্নাহ বলেন, কনটেন্ট হাতে পেয়েছি। এখন রেকর্ডিং করে চলতি সপ্তাহের মধ্যে টিভিতে ক্লাস দেখানো শুরু করা সম্ভব হবে। এদিকে মাধ্যমিকে 'আমার ঘরে আমার ক্লাস' শিরোনামে ২৯ মার্চ থেকে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির ক্লাস দেখানো শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এই ক্লাস দেখে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ করে স্কুল খোলার পর তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে। এই বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে মাধ্যমিকে এসব ক্লাস করাতে গিয়ে এখন শিক্ষক সংকটে ভুগছেন অধিদপ্তর। বাধ্য সারাদেশ থেকে ক্লাস করাতে চান এরকম শিক্ষকদের চাহিদা চেয়েছে মাউশি। মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাসগুলো ভিডিও রেকর্ডিং করতেই ১৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এটা সংসদ টিভিতে পাঠদান সম্প্রচার করতে ব্যয় হবে বলে চাহিদাপত্রে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন রেকর্ডিং করতে কোনো ব্যয় হওয়ার কথা না। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান বু্যরো ব্যানবেসইসে এ রেকর্ডিং হওয়ার কথা। সংসদ টিভি সরকারি টিভি হওয়ায় এখানে কোনো ব্যয় হওয়ার কথা না। এছাড়া রাজধানীর কয়েকটি নামকরা স্কুলের শিক্ষকরা দেশের এমন পরিস্থিতিতে নিজ দায়িত্বে ক্লাস রেকর্ডিং করছেন। শুধু ভিডিও রেকর্ডিং করতেই এত বিশাল অঙ্কের বাজেট নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের জন্য ১৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় মাউশি। তবে এ বিশাল বাজেটের কার জন্য এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। টিভিতে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি দেখভাল করছেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। ১৬ কোটি টাকা কোন খাতে ব্যয় ধার্য করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় হবে তাও তিনি বলতে পারেন না বলে জানিয়েছেন। বাজেটের বিষয়টি মাউশির প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন শাখা করতে বলেছে জানান তিনি। মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্যের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে মাউশির মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। তবে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা যায়, শিক্ষা অধিদপ্তরের সুযোগ সন্ধানীরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্টুডিও ব্যবহার করছেন ভিডিও রেকর্ডিংয়ের জন্য। যদিও কথা ছিল রেকর্ডিংয়ের জন্য শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যানবেইসের স্টুডিও ব্যবহার করার। তাড়াতাড়ি করার অজুহাত দেখিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। অথচ ঢাকার কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের স্টুডিও ছিল। তবুও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারের কাজে যুক্ত করছে শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এদিকে দ্বিতীয় দিনে মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাসগুলোর রুটিন ঠিক না। সকাল ৯টা ১২টা পর্যন্ত ক্লাসগুলো যে রুটিন দেওয়া হয় প্রচারের সময় সেগুলো মানা হয়নি। এছাড়া বোর্ডেও অক্ষর ছোট, শব্দ ভালোভাবে বুঝতে না পারার মতো কিছু যান্ত্রিক সমস্যা ছিল। তবে সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।   প্রাথমিকের ক্লাস ও কনটেন্ট তৈরি করছে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ), কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ এবং ভিডিও কনটেন্ট তৈরিতে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ওইসব গ্রম্নপে রাখা হয়েছে, তারা প্রতিদিনই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রাথমিকের ভিডিও কনটেন্টে শিশুদের পাঠ তাদের মতো করেই তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষকদের তৈরি ভিডিওতে কিছু অ্যানিমেশন যুক্ত করা হবে। সংসদ টিভির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এই টিভি ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন অনলাইন পস্নাটফর্মে এসব কনটেন্ট আপলোড করার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। শিশুদের লেখাপড়াটা যেন একটু হলেও চালু থাকে সে বিষয়ে মেসেজে বলা হয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময় ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম যেমন, গুগল ক্লাসরুম, জুম, হ্যাংআউট, স্কাইপের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাইভ ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদান পরিচালনা করতে প্রাথমিকের শিক্ষা কর্মকর্তাদের সম্প্রতি এক চিঠিতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।