ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স

বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম সহ্য করা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে ৬৪ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন -ফোকাস বাংলা
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম করলেও সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার গণভবন থেকে ৬৪ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এই হুঁশিয়ারি দেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিত্তবানদের সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তা হবে দুঃখজনক। এটা আমরা সহ্য করব না। তিনি বলেন, ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। কৃষক, চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তারা দৈনন্দিন কাজে যেতে পারছে না। তাদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। সেখানে ১০ টাকা কেজি চালসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের কাছে সাহায্য ও খাদ্যদ্রব্য পাঠাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড অনুযায়ী তালিকা করতে হবে। সেই অনুযায়ী সবাই যেন সাহায্য পায়। কেউ যেন বাদ না পড়ে।' তিনি বলেন, সাহায্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কোনো রকম দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুঃসময় কেউ সুযোগ নিলে, কোনো অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু তাকে ছাড়ব না। বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম সহ্য করা হবে না। করোনা মোকাবিলায় দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটা ছোট, কিন্তু জনসংখ্যা বিশাল। এরপরও আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। সে জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে রয়েছে। সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন। কারণ, নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা রয়ে গেছে। আমরা বিশ্ব থেকে দূরে নই। আমাদের আরও সচেতন থাকা দরকার। আমরা আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অনেক আগে থেকেই কাজ করেছি। ভবিষ্যতে যেন করোনা না ছড়ায়, সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কোনো লুকোচুরি করার সুযোগ নেই। লুকোচুরি করার অর্থ নিজের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া। জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। জনকল্যাণে যেসব কাজ, তা করতে হবে যথাযথভাবে নিয়ম মেনে। নববর্ষের আয়োজনও বন্ধ এদিকে দেশের নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে এবার নববর্ষে জনসমাগম করে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। তিনি বলেন, 'নববর্ষের অনুষ্ঠান আমি মনে করি ডিজিটাল পদ্ধতিতেই আপনারা করতে পারেন। সেখানে সবাই যথাযথ আকারে করুন। কিন্তু বিশাল জনসমাগম করে এই অনুষ্ঠান সারা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। এটা আমার বিশেষ অনুরোধ।' আসছে ১৪ এপ্রিল শুরু হবে বাংলা ক্যালেন্ডারের নতুন বছর-বঙ্গাব্দ ১৪২৬। নতুন বছরে পুরনো সব জীর্ণতা মুছে যাবে- এই প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিবছর নানা আয়োজনে বৈশাখের প্রথম দিনটি উদ্‌যাপন করে বাংলাদেশের মানুষ। রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে উদ্বেগ করোনা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আমরা চিন্তিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন ভালোভাবে সংরক্ষিত হ্ল সেটা দেখতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যদি কোনোরকম কিছু হয়ে যায়, তাহলে খুবই ক্ষতি হবে।' প্রধানমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহিরাগত কারও প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, 'ক্যাম্পে বাইরের কারও যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী সবাই আছেন, তারা কাজ করছেন। আমাদের যারা আছেন, তারাই সেবা দেবেন। বাইরের কেউ যেন সেখানে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।' মশারা সংগীতচর্চা করছে রাজধানীতে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মশার গান আমি শুনতে চাই না। মশা মারতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কাল রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন দেখলাম মশারা সংগীতচর্চা করছে। মশার গান শুনলাম। মশা গুনগুন করে কানের কাছে গান গাচ্ছিল। অর্থাৎ মশার প্রাদুর্ভাব কিন্তু আস্তে আস্তে শুরু হবে। এরপর আসবে ডেঙ্গু। তো এ ব্যাপারে কিন্তু এখন থেকে আমাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এখন থেকে আমাদের প্রত্যেক নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বলব, মশার হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে এখন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।' তিনি বলেন, আমি মশার গান শুনতে চাই না। মশা মারতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি চালু থাকবে : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় চলমান ছুটি বাড়ানো হলেও ৪ এপ্রিলের পর থেকে শিল্প কারখানা, ইন্ডাস্ট্রিসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো চালু রাখতে হবে। কারণ, আমাদের পণ্য তৈরি করতে হবে। তাই ৪ তারিখের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিগুলো চালু করে দিতে পারেন।