করোনার মতো উপসর্গ নিয়ে ৫ জনের মৃতু্য

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯-এ গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত হলেও বাংলাদেশে এর সংক্রমণ ও ভয়াবহতা এখনও নিয়ন্ত্রণে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দেশে করোনাভাইরাসে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে। এদের মধ্যে নতুন করে আরও একজন মারা গেছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। ভাইরাসটি থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও একজন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেসব উপসর্গ দেখা যায়, তেমনই উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫ জনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। এসব উপসর্গের মধ্যে ছিল জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। ঢাকা : শ্বাসকষ্টসহ নভেল করোনাভাইরাসের মতো লক্ষণ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তির মৃতু্য হয় বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার নমুনা নেওয়ার জন্য আইইডিসিআরকে বলা হয়েছে।' হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে মেডিসিন বিভাগে এসেছিলেন। 'নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় তাকে আইসোলেশন ইউনিটে পাঠানো হয়।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, 'কোনো রোগীর তথ্য স্পেসিফিক বলি না। রোগীর পরিচয় নিশ্চিত করা যায় এমন তথ্য দিব না। যদি এসে থাকে তাহলে টেস্ট হয়েছে অথবা হচ্ছে।' সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি নিয়ে এক নারী মারা গেছেন। বুধবার ভোরে কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামে বাবার বাড়িতে তার মৃতু্য হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, হৃদ?রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃতু্য হয়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে মনে করছে। ওই নারীর নাম রাশিদা খাতুন (২৫)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের ফতেপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও পাশের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বন্দকাটি গ্রামের আবদুস ছালামের মেয়ে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যার দিকে রাশিদা খাতুনের জ্বর শুরু হয়। বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান রাশিদা। রাশিদার বাবা শিক্ষক আবদুস ছালামের বরাত দিয়ে ইউপির চেয়ারম্যান আরও বলেন, রাশিদা মৃতু্যর আগে তার শরীর জ্বালা করার কথা বলেছিলেন। তিনি বারবার গোসল করতে চাইছিলেন। সঙ্গে তার সর্দি-কাশি-হাঁচি, কোমরে ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও ছিল। জনপ্রতিনিধি ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাশিদা, তাঁর স্বামী, শ্বশুর কিংবা বাবার বাড়ির কেউ দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ির বাইরে যাননি। উপসর্গগুলো করোনাভাইরাসের মতো হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে ওই বাড়ির সদস্যদের আপাতত বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে। ঝালকাঠি : ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন বছরের এক শিশু মারা গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুটি নিজ বাড়িতে মারা যায়। এরপর স্থানীয় ছয়টি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ওই শিশুর নাম আলভী হোসেন। সে উপজেলার আমুয়া পূর্বপাড় সর্দারপাড়ার শহীদ সর্দারের ছেলে। কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, কয়েক দিন ধরে আলভী জ্বরে আক্রান্ত ছিল। শিশুটি জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় মারা যাওয়ায় সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আলভীর বাড়ির ছয়টি পরিবারের ৩০ জনকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। নড়াইল : সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে নড়াইলে শওকত হোসেন (২৫) নামে এক তরুণের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটার দিকে তাকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা শেষে ওয়ার্ডে নেওয়ার আগেই রাত নয়টার দিকে তিনি মারা যান। শওকত নড়াইল পৌরসভার দক্ষিণ নড়াইল গ্রামের ওমর আলীর ছেলে। মঙ্গলবার রাত একটার দিকে তড়িঘড়ি করে তাকে জানাজা ছাড়াই স্থানীয় সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়। শওকতের মৃতু্যর খবর জানাজানি হওয়ার পর শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশী বাবু মোলস্না বলেন, ১০ দিন ধরে সর্দি, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন শওকত হোসেন। তীব্র কাশির কারণে কখনো কখনো বমিও করে ফেলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকায় আইইডিসিআরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের হটলাইনে ফোন দিলেও সন্তোষজনক কোনো উত্তর আসেনি। ফলে কয়েক দিন ধরে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন শওকত। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শওকত হোসেনকে মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি বমিও হচ্ছিল। জরুরি বিভাগে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ভর্তির জন্য ওয়ার্ডে নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় মারা যান ওই তরুণ। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. মশিউর রহমান বলেন, কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে ১৫ মিনিটের মধ্যে মারা যেতে পারেন না। শওকত হোসেন 'মাইল্ড স্ট্রোকে' মারা গেছেন বলে তিনি ধারণা করছেন। রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে এক কলেজ ছাত্রের মৃতু্য হয়েছে। তিনি ওইদিন বিকেলে শ্বাসকষ্ট নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ওই তরুণের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ছিল না জানিয়ে চিকিৎসক বলেছেন, তিনি অ্যাজমার রোগী ছিলেন। ওই তরুণের নাম বুলবুল আহমেদ (২২)। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার নবীনগর গ্রামের আসলাম আলীর ছেলে। এদিকে লালপুরে লাশ দাফনে এলাকাবাসী আপত্তি তোলেন। অবশ্য পরে তারা শর্ত দেন, স্বজনেরা নিজ দায়িত্বে দাফন করলে আপত্তি নেই। সে মোতাবেক, বুধবার ভোরে লাশ দাফন করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাসংক্রান্ত জরুরি চিকিৎসক দলের আহ্বায়ক আজিজুল হক বলেন, ওই তরুণের জ্বর, সর্দি বা কাশির মতো করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ ছিল না। তবে তিনি অ্যাজমার রোগী ছিলেন। বিকাল পাঁচটার দিকে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন। রাত ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে তার মৃতু্য হয়। ওই তরুণের কারোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ ছিল না উলেস্নখ করে আজিজুল হক বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তারা চিকিৎসার জন্য বেশি সময়ও পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বুলবুল আহমেদ পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কয়েক দিনের জন্য তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। এরপর ৪ মার্চ বাড়িতে আসেন। এরপরই তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাড়িতে থেকে তিনি স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছিলেন। মঙ্গলবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ শেষ হলেই লাশ বাড়িতে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু নমুনা সংগ্রহের আগেই স্বজনরা লাশ নিয়ে রাতে গ্রামে চলে আসেন।