বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ কারণে করোনা আতঙ্ক

সোহেল হায়দার চৌধুরী
  ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
শিশুর তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মী

কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে অব্যাহত সন্দেহ, গুজব আর আস্থাহীনতায় দেশবাসীর মধ্যে সংশয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী পতিদিন মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিেেদশফেরতদের একটি বড় অংশকে খুঁজে না পাওয়াও আতঙ্ক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। এসব মোকাবিলা করে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সরকার কতটা সক্ষম হবে বা কবে নাগাদ মানুষ অস্থাশীল হবে সেটা নিশ্চিত নয়। তবে আতঙ্ক পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। ফলে নানা ধরনের সামাজিক সংকট তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রেস বিফিংয়ে প্রকাশিত পরিসংখ্যান নিয়ে মানুষের মাঝে নানা মত রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি 'নিয়ন্ত্রিত' একটি প্রেস ব্রিফিং বা এতে সঠিক তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। এই সন্দেহ আরও বেড়ে গেছে, যখন আইইডিসিআরের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, করোনা কমিউনিটি পর্যায়ে সীমিত আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৭ মার্চ আইইডিসিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন 'করেনাভাইরাস সীমিত আকারে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।' এরপর আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। জনগণ মনে করছে কমিউনিটিতে সীমিত আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে কথা আইইডিসিআর বলেছে, তা সত্য হলে দেশব্যাপী অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া আইইডিসিআরের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা নিয়েও জনগণ সন্তষ্ট নয়।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতু্য বৃদ্ধি দেশবাসীকে আরও বেশি অনিরাপদ করে তুলেছে। মানুষ মনে করছে, উন্নত বিশ্বে মৃতের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তেমনটি হলে বাংলাদেশ এ সংকট মোকাবেলা করতে হিমশিম খাবে। সেই পরিস্থিতিতে দেশের চিত্র কী হতে পারে তা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে অনেককে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষায় পিসিআর মেশিন বসালেও পরীক্ষার কিট স্বল্পতা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি থাকায় মানুষের মধ্যে ভয় বাড়ছে।

মাঠপর্যায়ে এমনকি নগরীতেও কোথাও কোথাও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনাভীতি এবং এর চিকিৎসা বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবও সংকট তৈরি করছে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি বড় সময় পার করেছেন পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতর্কের মাধ্যমে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের সব স্থানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা

\হপিপিই পাননি বলে শোনা যায়। পাশাপাশি করোনা নিয়ে তাদের ভীতি এবং এটি মোকাবিলায় হাতেকলমে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারণে সংকট বাড়ছে। এখনো দেশের ভিবিন্ন প্রান্তে সর্দি-কাশি বা শ্বসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বেগ পেতে হচ্ছে। যারা ভর্তি হতে পারছেন তারাও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের দেখলে অন্য রোগীরা আতঙ্কে ছুটে পালাচ্ছেন। সর্বোপরি দেশে হাজারো ক্লিনিক থাকলেও সেগুলোতে চিকিৎসা প্রদানে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দেওয়াও সংকট বাড়াচ্ছে।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসা প্রতেক্যকে এখনো খুঁজে না পাওয়াও আতঙ্কের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে গত ২৯ মার্চ পর্যন্ত ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন দেশে ফিরেছে। তার মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা গেছে। বাকিরা কোথায় আছে সে তথ্য নেই প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। নানা উপায়ে এদের শনাক্ত করার চেষ্টা হলেও তা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। ফলে সংশয় ও আতঙ্ক দুই-ই বাড়ছে। বিদেশফেরতদের শনাক্ত করতে না পারা এবং ভাইরাসটি সংষ্পর্শ থেকে ছড়ায় এমন নিশ্চিত তথ্যের কারণে মানুষের মধ্যে থাকা আতঙ্ক কাটছে না।

পাশাপাশি নানা ধরনের গুজব এবং অবৈজ্ঞানিক তথ্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু ব্যক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানা আইডি। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। গুজব সৃষ্টিকারী কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনাও হয়েছে। তারপরও গুজব বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে 'আগামী সময়গুলোতে করোনাভাইরাস ডিম ছাড়বে' এবং 'সামনের সপ্তাহ অত্যন্ত সংকটময়' এমন কথা প্রচারিত হওয়ার পরে সংকট ডালপালা মেলছে। ইউটিউবের বিভিন্ন আইডি থেকে নানাধরনের তথ্য প্রকাশ, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক স্ট্যাটাস ও মন্তব্য মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। ফেসবুকে প্রকাশ্যে স্ট্যাটাসের পাশাপাশি বিভিন্ন আইডি থেকে মেসেঞ্জারে নানা ধরনের ছবি, ধারণকৃত বক্তব্য দিচ্ছেন নানাজন। নানা ধরনের টোটকা চিকিৎসাও দিচ্ছেন অনেকে। কী খেলে করোনা হবে না, কী খাওয়া যাবে না, বাংলাদেশে কত লোক মারা যেতে পারে করেনাভাইরাসে বা কোন দোয়ার কারণে করোনা থেকে মুক্ত থাকা যাবে ইত্যাদি হাজারো কথা এখন ইউটিউব বা ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। এসবের সঙ্গে প্রকৃত চিত্র, সঠিক তথ্য বা চিকিৎসাশাস্ত্রের কোনো মিল নেই। তবুও মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95121 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1