এলাকাবাসীর বিচার দাবি

আ'লীগ নেতার গুদাম থেকে ভিজিডির বিপুল চাল উদ্ধার

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতার গুদাম থেকে বৃহস্পতিবার দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দ ভিজিডির ১৩৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয় -যাযাদি
নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতার গুদাম থেকে দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিডির ১৩৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসংলগ্ন গুদাম থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা চালের পরিমাণ চার মেট্রিক টন। ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আয়েত আলী। তিনি উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য। এলাকায় তার ধান-চালের আড়তের ব্যবসা আছে। রানীনগর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নে ২৫০ জন হতদরিদ্রের মধ্যে ভিজিডির চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছিল। প্রত্যেককে ৩০ কেজি করে মোট প্রায় সাড়ে সাত মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব চাল বিতরণ কার্যক্রমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) হিসেবে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাকাম্মাম মাহমুদা দায়িত্বে ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা আয়েত আলীর বাড়িসংলগ্ন গুদামে ভিজিডির চাল মজুত করা রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মাকাম্মাম মাহমুদা উপজেলার রাতোয়াল শালগাড়ীপাড়া গ্রামে আয়েত আলীর বাড়িতে অভিযান চালান। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। পরে ইউএনও আবদুলস্নাহ আল মামুন, কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউএনও) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও রানীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমারা ১৩৮টি চালের বস্তা জব্দ করে। এ ছাড়া ওই গুদাম থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমারা আরও ২০০টি খালি বস্তা জব্দ করা হয়। ঘটনার পর থেকে আয়েত আলী পলাতক। কালিগ্রাম ইউনিয়নে কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, আয়েত আলী বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগসাজশ করে কম দামে ভিজিডির চাল কিনে পরে সেগুলো খোলাবাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। গত বুধবার রাতে এলাকার লোকজন খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমারা বস্তা তার গুদামে নিয়ে যেতে দেখেন। বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তাকে জানালে তার গুদামে তলস্নাশি চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে আয়েত আলী এই কারসাজি করে আসছেন। তদন্ত করলে ইউপির চেয়ারম্যানদেরও এই কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে। এসব ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। এ বিষয়ে কালিগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, 'আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ভিজিডি কার্ডধারী যেসব মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে আয়েত আলী চালগুলো কিনে নিয়েছেন। এখানে ইউপির লোকজন কোনোভাবে জড়িত নন। ইউএনও সাহেবও কার্ডধারী কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর সত্যতা পেয়েছেন।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে রানীনগরের ইউএনও আল মামুন বলেন, "অনিয়ম করে ব্যবসায়ী আয়েত আলী ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারি চাল ক্রয় করে মজুত করেছেন। আমরা অভিযান চালিয়ে 'খাদ্য অধিদপ্তর, নেট ওজন ৩০ কেজি' সিলমারা ১৩৮ বস্তা চাল জব্দ করেছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ব্যবসায়ী আয়েত আলী পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছেন কিনা, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।"