করোনা সংকট মোকাবিলায় বিএনপির ২৭ দফা

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ২৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের 'প্যাকেজ প্রস্তাবনা' রয়েছে। স্বল্প মেয়াদি খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, মধ্য মেয়াদি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত আরও ৮ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্টভাবে খাতওয়ারি বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি খাতের আওতায় ২৭ দফার এই প্রস্তাবনায় সুপারিশসমূহ সরকারের কাছে বিএনপি প্রেরণ করবে। শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্যাকেজ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময়ে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রদত্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থ সমন্বয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল ঘোষণা করতে হবে। শাটডাউন প্রত্যাহার হলে নতুন করে একটি সংশোধিত আর্থিক প্যাকেজ প্রদান করতে হবে যে, সকল সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সাধারণ ছুটিপূর্ব স্তরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যেকোনো গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে সরকারকেই এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কারণ উদ্যোগটা পুরোটাই সরকারের। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহান আলস্নাহর অশেষ রহমতে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব-ইনশালস্নাহ। করোনাভাইরাস সংক্রমণে দারিদ্র্য, গৃহহীন, দুস্থ জনগোষ্ঠীর মুখে খাবার তুলে দিতে দেশের জনহিতৈষী ও বিত্তবানদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে দুই দফা লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে টেলি করফারেন্সের মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ বাসায় বসে বৈঠক করে এই ২৭ দফার প্যাকেজ প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। স্বল্প মেয়াদি প্রস্তাবনার মধ্যে 'দিনে এনে দিনে খায়' ক্যাটাগরির সকল শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, হকার, ভাসমান শ্রমিক, ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সিএনজি ড্রাইভার, ভাড়াভিত্তিক গাড়িচালক (উবার, পাঠাও) পরিবহণ শ্রমিক, বস্তিবাসী ইত্যাদি মহামারির কারণে শাটডাউনে কর্মহীন হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে খাবার তুলে দিতে চাল-ডাল-লবণ-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এপ্রিল-মে-জুন তিন মাসের জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকার নগদ অর্থ বরাদ্দ, আশ্রয়হীনদের অস্থায়ী আবাসন ও প্রয়োজনে তাদের জন্য তৈরি খাবার সরবরাহে নূ্যনতম ৮ হাজার কোটি টাকা, সমস্ত শ্রমিকশ্রেণিকে (গার্মেন্ট, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় শিল্প ও প্রাতিষ্ঠানিক খাত) সেবার জন্য অর্থ ও জীবনযাত্রায় সমর্থন প্রদান ও তাদের নগদ অর্থ সাহায্য প্রদান, ৬ মাসের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টশ্রমিক, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত অন্যান্য শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা, কৃষকদের উন্নয়ন ও বীজসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ ৫ হাজার কোটি টাকা, এক বছরের জন্য পলট্রিসহ সব ধরনের কৃষি ঋণের কিস্তি ও সুদ মওকুফ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সকল ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ, প্রবাসী শ্রমিক যারা দেশে ফিরেছে তাদের জন্য তিন মাসের জন্য মাসিক ১৫ হাজার টাকার আপৎকালীন সাপোর্ট প্রদানে এই খাতে ১ হাজার কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাত এবং করোনা মোকাবিলার সাথে যুক্ত যেসব হাসপাতাল ও সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যুক্ত প্র্রতি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু, চিকিৎসকদের জন্য এক কোটি, নার্সদের জন্য ৭৫ লাখ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমার বিপরীতে প্রিমিয়াম সরকারকে বহন করা, বয়স্ক নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী, ষাটোর্ধ্ব বয়স্কদের আগামী তিন মাস ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদানে এই খাতে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যারা গ্রামে চলে গেছেন তাদের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা আপৎকালীন ভাতা প্রদান, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোকে আগামী তিন মাসের জন্য রান্নার গ্যাস ও গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার সরবরাহের সুপারিশ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অবিলম্বে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি আপৎকালীন 'অর্থনৈতিক টাস্কফোর্স' গঠনের সুপারিশও করেছেন অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল। করোনাভাইরাসের চিকিৎসার বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে করোনা চিকিৎসক, নার্স, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার সাথে যুক্ত চিকিৎসা সহকারীদের জরুরি ভিত্তিতে পিপিই, কিট ও আনুষঙ্গিক ওষুধ ও দ্রব্যাদি সরবরাহ, রাজধানী ঢাকা, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল স্থাপন, পৃথক কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশনের ব্যবস্থাগ্রহণ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ, পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট আমদানি ও উৎপাদন, দ্রম্নত নতুন আইসিইউ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর ও চিকিৎসা সামগ্রী শুল্কমুক্ত আমদানির ব্যবস্থা করা, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল ও রাজধানীর বড় বড় শূন্য আবাসিক হোটেলগুলোকে সাময়িকভাবে হাসপাতালে রূপান্তরিত করা, নদীতে ভাসমান জাহাজে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা। মধ্যমেয়াদি প্রস্তাবনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতিপয় সিদ্ধান্তের সাথে ঋণগ্রহীতাদের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সুদ মওকুফ ও ঋণের নিয়মিত কিস্তি তিন মাসের জন্য স্থগিতকরণ, সব ব্যাংককে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা প্রদান, তারল্য বৃদ্ধি করে ফিনান্সিয়াল মার্কেটের আস্থা বাড়াতে সম্প্রসারণশীল মনিটরিং পলিসি গ্রহণ, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ নূ্যনতম ১৫%-১৬% উন্নীতকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট, সিআর, এসএলআর, রিপোর হার কমানো, ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড ক্রয়, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের জন্য এবং বিশেষ করে দেশীয় পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য রি-ফাইন্যান্স করা, এসএমইর অথপ্রবাহ নিশ্চিত করতে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট রিলিফ প্যাকেজ প্রদান, সরকারের ব্যয় সংকোচন, অপচয় রোধ করে সেই অর্থ দিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিল্পকে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান, করনীতির আওতায় করপোরেট করের হার হ্রাস, আপৎকালীন সময়ের জন্য কর মওকুফ, ব্যক্তিগত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স আদায় বন্ধ রাখা, অপ্রয়োজনীয়, অনুৎপাদনশীল ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া, অপচয় রোধ, কঠোর কৃচ্ছ্রতা সাধন করা, মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যয় কিছুটা মন্থর করা, অসাধু ব্যবসায়ী ও দালাল শ্রেণির লোকদের ওপর নজরদারি রেখে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা, উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন নির্বিঘ্ন রাখা, অবিলম্বে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও আইএমএফসহ দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে অর্থ সগ্রহ করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুটি জমা দুর্যোগকালীন সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখা, প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে এই সময়ে ছাঁটাই না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ড স্থবির হওয়ায় তা সচল করতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, কৃষিখাতে সহায়তা প্রদানে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, খাদ্য প্রবাহ যেন বন্ধ না হয় সেজন্য ব্যবস্থাগ্রহণের সুপারিশ রয়েছে। গণমাধ্যমের জন্য আর্থিক প্যাকেজ প্রদানের সুপারিশ করে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, তথ্য প্রবাহ ও জনমতামত তুলে ধরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। করোনাভাইরাস মহামারিতে সংবাদকর্মীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যে আর্থিক প্যাকেজ পেশ করা হয়েছে তার অধিকাংশই যুক্তিসংগত। দেশের এই ক্রান্তিকালে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাংবাদিকদের আর্থিক ও অন্য দাবিগুলো সুবিবেচনা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবনার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তাদের মৌলিক ভূমিকায় ফিরিয়ে এনে বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যথাযথ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আর্থিক, ব্যাংকিং ও করব্যবস্থায় সংস্কার, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত নীতি গ্রহণ, প্রবাসীরা দেশে ফিরলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাগ্রহণের কথা রয়েছে। সংক্রামক মহামারির প্রসঙ্গ টেনে প্রস্তাবনায় বলা হয়, দেশে ইবোলা, ডেঙ্গু বা করোনাভাইরাসের মতো মহামারি মোকাবিলায় যথাযথ সক্ষমতা গড়ে তুলতে দক্ষ জনবল, পরীক্ষা কিট, পিপিই, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংবলিত পর্যাপ্ত সংখ্যক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরা যুদ্ধাবস্থার মতো যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। সররকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভেন্টিলেটর নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলা, ইনিভার্সাল হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন তা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বিএনপির ঘোষিত ভিশন-২০৩০ মোতাবেক জিডিপির ৫% উন্নীত করতে হবে। ২৭ দফার সুপারিশ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সুপারিশগুলো জরুরিভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমের সাংবাদিক, দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিজ্ঞানী, রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিরলস ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিএনপি মহাসচিব। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষায় কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যথাযথ সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ সুপারিশ রয়েছে এই প্যাকেজ প্রস্তাবনায়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দলের কার্যক্রম তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিও বার্তায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের স্থানীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং লকডাউনের কারণে কর্মহীন দুস্থ জনগণের মুখে দু'মুঠো খাবার তুলে দিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মহামারির ভয়াবহতা অনুভব করে বিএনপি প্রথম থেকেই জনগণের মধ্যে গণসচেতনতামূলক সচিত্র লিফলেট, মাস্ক, বিতরণ করে, দিনমজুরশ্রেণির কষ্ট কিছুটা লাঘবে সারাদেশে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাব হেল্পলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও সহযোগিতা প্রদান শুরু করেছে। প্রতিদিন এই কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যতদিন প্রয়োজন আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও আইইডিসিআর-এর হটলাইনে ফোন করে সেবা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী দেশে গত দুই মাসে ৮ লাখ মানুষ করোনা হটলাইনে টেস্টের জন্য ফোন করেছে। আইইডিসিআর একাই ৭০ হাজারের ঊর্ধ্বে কল পেলেও ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ জনকে টেস্ট করেছে তারা। তার মধ্যে ৪৮টি কেস পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বারংবার তাগিদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বনিম্ন টেস্টিং দেশের অন্যতম। অন্যদিকে ফেটেলিটি রেইটের চিত্র দেখলে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের করোনা মৃতু্যর হার বিধ্বস্ত ইতালির তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে করোনা মৃতু্যর হার ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ ইতালিতে করোনা মৃতু্যর হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ। নিঃসন্দেহে রোগ পরীক্ষার স্বল্পতাই এই হিমশীতল মৃতু্য হারের কারণ। প্রতি হাজারে দক্ষিণ কোরিয়া যেখানে টেস্ট করেছে ৬ জন সেখানে বাংলাদেশ প্রতি ১০ লাখে টেস্ট করেছে মাত্র ৬ জন। এটা উদাসীনতা না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বোধগম্য নয়। এই মহাদুর্যোগের সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যের অস্বচ্ছতার কারণে জাতিকে কোনো চড়া মূল্য দিতে হয় কি না সেটাই আশঙ্কা।