বিশ্বে মৃতু্য ৬০ হাজার ছাড়াল

আক্রান্তের সংখ্যাও সাড়ে ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ৮ প্রজাতির করোনা

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মহামারি করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে প্রায় অচল করে দিয়েছে। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন ঘরবন্দি। আতঙ্কিত মানুষ প্রাণ হারানোর ভয়ে সবসময় তটস্থ। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটারের' সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যাও সাড়ে ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স করোনায় সবচেয়ে বাজে অবস্থা ইউরোপ ও আমেরিকার। করোনায় বেশির ভাগ মৃতু্য হয়েছে এই দুই মহাদেশে। সবচেয়ে বেশি মৃতু্য ইতালিতে; ১৪ হাজার ৭৮১ জন। ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনের অবস্থান তারপরই। সেখানে মৃতু্য হয়েছে ১১ হাজার ৭৪৪ জনের। ইতালি আর স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃতু্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ফ্রান্সে ছয় হাজার ৫০৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, ইরান ও চীনে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে তিন হাজার ৬০৫, তিন হাজার ৪৫২ এবং তিন হাজার ৩২৬ জন। এছাড়া নেদারল্যান্ডে এক হাজার ৬৫১, বেলজিয়ামে এক হাজার ২৮৩ এবং জার্মানিতে এক হাজার ২৭৫ জন মারা গেছে। মহামারি করোনাভাইরাসে মোট মৃতু্যর অর্ধেকের বেশি ইউরোপে। যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ করোনায় মারা যেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও করোনার কেন্দ্র এখন ইউরোপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) বলছে, এরপরের কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের মুম্বাইয়ে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিতে করোনা আক্রান্ত একজনের মৃতু্যর পর দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে মৃতের দিক দিয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত। এদিকে, দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়ে চীনকে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, দেশটি প্রথম ধাক্কা সামলে উঠলেও এখন আবার সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। এছাড়া হংকং, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে প্রথম দিকে সংক্রমণ ততটা না ছড়ালেও এখন বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ইরানের। তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্যর পাশাপাশি দেশটিতে ৫৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত। তবে দেশটির বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'ওয়াশিংটন পোস্ট' দাবি করছে, চীনে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্য হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়াল স্পেন : এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া সাত হাজার ২৬ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত নিয়ে স্পেন আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার দেশটিতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার, যা ইতালির চেয়ে বেশি। শুক্রবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৪৭২ জন ছিল, কিন্তু পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪৬ জন কমেছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত স্পেনে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দৈনিক মৃতু্যর সংখ্যাও কমেছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৮০৯ জনের মৃতু্য হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯৩২ থেকে ১২৩ জন কম বলে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের বরাতে জানিয়েছে গণমাধ্যম। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে শনিবার স্পেনে মৃতু্যর সংখ্যা আগের দিনের ১০ হাজার ৯৩৫ জন থেকে বেড়ে মোট ১১ হাজার ৭৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। স্পেনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে বলেছিলেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালভাদর ইয়া। এখন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমায় তার বক্তব্যের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। স্পেনজুড়ে চলা তিন সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শনিবার শেষ হয়েছে। লকডাউনের এ পর্বে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ এবং অধিকাংশ ব্যবসা বন্ধ ছিল। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ লকডাউনের সময়সীমা আরও অন্তত দুই সপ্তাহ বাড়াবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য জানা যায়নি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ৮ প্রজাতির করোনা :গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হয় করোনাভাইরাসের, যা এখন বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, উহান থেকে ছড়ানো করোনার সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের করোনার মিল নেই। বিজ্ঞানীদের দাবি, করোনাভাইরাসের ৮টি প্রজাতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে। এসব ভাইরাস দ্রম্নত তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করছে। আর এজন্যই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে ব্যাপক প্রাণহানি হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে তেমন প্রভাব পড়েনি।