প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন -ফোকাস বাংলা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে নতুন করে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। রোববার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও কেন্দ্রগুলো প্রেস কনফারেন্সটি সরাসরি সম্প্রচার করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়। চীনে করোনা ছড়ানোর পরপরই বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে এ যাবৎ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও মৃতু্যর তথ্য তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আটজন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মারা গেছেন, তাদের প্রত্যেকের বয়স ৭০ বছরের উপরে এবং তারা অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তবে একটি মৃতু্যও কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জনসাধারণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শুরু থেকে তিন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি বৈশ্বিক মহামন্দা অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের আর্থিক পরিস্থিতির ওপর করোনার প্রভাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে গেছে। শেয়ারবাজারের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। করোনার প্রভাব প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে পড়তে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তার পদক্ষেপ হিসেবে তাৎক্ষণিক করণীয়, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান। এর ফল নিম্নবিত্ত মানুষ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিক-কর্মচারী বা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণসুবিধা দেওয়ার কথা জানান। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়ানোর কথা জানান শেখ হাসিনা। প্যাকেজ-১ : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক-ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেওয়া। এ ঋণসুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। প্যাকেজ-২ : ক্ষুদ্র (কুটিরশিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক-ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। প্যাকেজ-৩ : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো: বস্নক টু বস্নক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার খওইঙজ + ১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩ %) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে। প্যাকেজ-৪ : প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণসুবিধা চালু করবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ। প্যাকেজ-৫ : এর আগে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আশ্চর্য সহনশীল। তারা ৯ মাসের মধ্যে যুদ্ধ জয় করেছে। জাতির পিতা বলেছিলেন, এ জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। জাতির পিতার এ বাণী স্মরণ করে এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘোষিত প্যাকেজের সুফল পাওয়া যাবে। এক সময় নিশ্চয়ই বিপদ কেটে যাবে। তবে সরকারকে চালকের আসনে বসতে হবে।