বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ গ্রেপ্তার

সাড়ে ৪ দশক পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয় -ফোকাস বাংলা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে পলাতক অন্যতম আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি বিশেষ দল মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকা থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করে। দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক এএম জুলফিকার হায়াত এই দন্ডিত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সে সময় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, আদালতে মাজেদের পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা। তার ওপরে বুলেট প্রম্নফ ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট ছিল। কাঠগড়ায় তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়নি। আদালতে কোনো আইনজীবী মাজেদের পক্ষে দাঁড়াননি বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন। তিনি বলেন, আদালতের আদেশের পরপরই মাজেদকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর আগে সকালে আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মাজেদ ভারতে পালিয়ে আছেন বলে এর আগে বিভিন্ন সময়ে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাকে বাংলাদেশেই পেয়েছি। হয়তো করোনার ভয়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনাসদস্য। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খুলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দন্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)। কিন্তু ফাঁসির দন্ডাদেশ পাওয়া ছয় আসামি বিদেশে পলাতক থাকেন। তাদের বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ জারি করে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নবায়ন করা হচ্ছিল। এরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, এএম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কথা সরকার আগেই জানিয়েছিল। তাদের ফিরিয়ে এনে দন্ড কার্যকর করতে সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তরফ থেকে সাড়া মেলেনি। বাকিদের মধ্যে মাজেদ ভারতে এবং মোসলেম উদ্দিন পাকিস্তানে আছেন বলে তথ্য ছিল ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল বু্যরোর (এনসিবি) কাছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে ভারত বলেছিল, মাজেদ তাদের দেশে নেই। আর পাকিস্তান কোনো জবাব দেয়নি। রশিদ ও ডালিমের অবস্থানের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনো মেলেনি বলে এনসিবির দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাপরিদর্শক মহিউল ইসলাম গত বছর জানিয়েছিলেন।