এমপি-ইউএনওর দেওয়া ত্রাণ কেড়ে নিলেন যুবলীগ নেতা

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
সামাজিক দূরত্ব মেনে বসানো হয়েছে নিরন্ন নারী-পুরুষদের। প্রত্যেকের সামনে রাখা রয়েছে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যের প্যাকেট। সন্ধ্যার একটু আগে উপস্থিত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা। সেখানে আগেই উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। এরপর ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্থান ত্যাগ করেন এমপি, ইউএনও এবং পৌর মেয়র। এরপর স্থানীয় যুবলীগের এক নেতার নেতৃত্বে তিনজন গরিব অসহায় নারী-পুরুষের হাত থেকে ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর শহরের বলিদাপাড়ায়। তবে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার দাবি তালিকায় নাম না থাকায় তাদের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট নেওয়া হয়েছে। ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেন বলিদাপাড়ার যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন ও বাবরা গ্রামের লিটন আলী। সমীর হোসেন বলিদাপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম দফাদারের ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য। এদিকে ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেওয়ার সংবাদ পেয়ে বুধবার দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা দুজনের বাড়িতে ১০ কেজি করে চাল পৌঁছে দিয়েছেন। ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেওয়া হয় এমন একজন সুফিয়া খাতুন। সুফিয়া খাতুনের ভাষ্য, বলিদাপাড়ায় পরের জমিতে খুপরি করে অসুস্থ স্বামী হায়দার আলীকে নিয়ে থাকেন। কাজ করেন পরের বাড়িতে। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পরের বাড়ি কাজ করে যা পান তাই দিয়েই খরচ চালান। রোববার গিয়েছিলেন ত্রাণ নিতে। ত্রাণের প্যাকেট সামনে নিয়ে ছবি তোলার পর তা আবার কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর খালি হাতে ফিরে আসেন বাড়িতে। ওই দিন ত্রাণ নিতে আসা কয়েকজন জানান, রোববার বিকালে বলিদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। পৌরসভার গাড়িতে করে এসব ত্রাণ নিয়ে আসা হয়। এ সময় অসহায়দের ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, ইউএনও সুবর্ণা রানী সাহা ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ত্রাণ বিতরণ করতে মাঠে আসেন। তারপর তাদের সামনে দেওয়া হয় ত্রাণের প্যাকেট। ত্রাণ বিতরণ শেষে মাগরিবের আজান দেওয়ায় স্থানীয় সাংসদ ও পৌর মেয়র বিদ্যালয় মাঠ ত্যাগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও চলে যান। এরপর অসহায় তিনজনকে বলা হয় আপনাদের নাম তালিকায় নাই। আরেক ভুক্তভোগী বাহাদুর মন্ডলের স্ত্রী সুন্দরী খাতুন বলেন, আমার স্বামীর বয়স প্রায় ৮০ বছর। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। একটিমাত্র ছেলে ভাঙ্গারির ব্যবসা করে। অনেকদিন ধরে কাজে যেতে পারছে না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। সেখান থেকে যা পাই সেটা দিয়েই চলি। ঘটনার দিন চাল দেওয়ার পর আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন ত্রাণ নিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তাদের তালিকায় নাম না থাকায় ত্রাণ নিয়ে অন্যদের দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, 'ত্রাণ কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে, লোক মাধ্যমে জানার পর দুজনার বাড়িতে চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।' ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য জানান, অভিযুক্ত সমীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলে এবং অন্য মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ত্রাণের তালিকায় দুজনের নাম না থাকায় তাদের লাইনে দাঁড়াতে দেয়নি। ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেওয়া হয়েছে বিষয়টি সত্য নয়। তবে তাদের বাড়িতে চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে যোগ করেন এই তরুণ সংসদ সদস্য আনার।