পেট্রলে দগ্ধ পাবনার কলেজছাত্রী আর নেই

মৃত্যুতেই ‘মুক্তি’ মুক্তির

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মুক্তি খাতুন
পেট্রলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে ১০ দিন পাঞ্জা লড়ে শেষ পযর্ন্ত চলে গেলেন পাবনা সরকারি এডওয়াডর্ কলেজের দশর্ন বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বষের্র ছাত্রী মুক্তি খাতুন। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বানর্ ইউনিটে মুক্তি মারা যান। মুক্তি খাতুনের বড় ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সোমবার রাতে তার বোন মারা গেছেন। এখন লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে আছে। পরে সেখান থেকে লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হবে।’ মুক্তির বাড়ি পাবনার সঁাথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়াডর্ কলেজের দশর্ন বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বষের্র ছাত্রী ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের মেয়ে। ঈদ উপলক্ষে কলেজ ছুটি হলে তিনি বাড়ি গিয়েছিলেন। এরপর ওই হামলার শিকার হন। পুলিশ, এলাকাবাসী ও ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, নাগডেমরা গ্রামের একটি উন্মুক্ত জলাশয়ের দখলকে কেন্দ্র করে মুক্তির বাবার সঙ্গে একই গ্রামের আবদুস সালাম ও তার লোকজনের দীঘির্দন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২ আগস্ট সালামের লোকজন মুক্তিদের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এরপর থেকে মুক্তিদের বাড়ির লোকজন এলাকাছাড়া। পরে পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে মোজাম্মেল হক পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি ফেরেন। কথা ছিল ঈদের পর প্রশাসনের উদ্যোগে দুইপক্ষকে নিয়ে বিরোধটির মীমাংসা করা হবে। কিন্তু গত ১৮ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে আবদুস সালামের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি সশস্ত্র দল মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য ছিলেন না। প্রতিপক্ষের লোকজন মুক্তিকে উঠানে ধরে এনে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তিনি মারাত্মক দগ্ধ হন। পরে এলাকার লোকজন ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বানর্ ইউনিটে ভতির্ করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ আগস্ট মুক্তির বাবা মোজ্জাম্মেল হক বাদী হয়ে সঁাথিয়া থানায় আবদুস সালামসহ ৩২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। সোমবার বিকালে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মুক্তির বড় ভাই নাসির উদ্দিন বানর্ ইউনিট থেকে বলেন, ‘তার বোনকে যারা এমন নৃশংসভাবে পুড়িয়েছে, তাদের কঠিন সাজা চাই। কিন্তু এখনো প্রধান আসামিদের পুলিশ ধরতে পারেনি।’ সঁাথিয়া থানার পরিদশর্ক (তদন্ত) আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমরা এ পযর্ন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে জেলে রয়েছেন খাতুন (৪৫) ও মিনি খাতুন (৪৫) নামের দুই নারী। তারা কলেজছাত্রীর শরীরে পেট্রল ঢালা ও আগুন ধরানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা সবার্ত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া এলাকায় আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সাবর্ক্ষণিক পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করেছি।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সাকের্ল) মিয়া মোহাম্মদ আশীষ বিন হাসান বলেন, ছাত্রীর শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যায়। এটি অত্যন্ত মমাির্ন্তক একটি ঘটনা। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। প্রধান আসামি পলাতক। তবে যেকোনো মূল্যে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন এদিকে কলেজছাত্রী মুক্তি খাতুনকে গায়ে পেট্রল ঢেলে হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখা ও আমরাই পারি পারিবারিক নিযার্তন প্রতিরোধ জোট। মঙ্গলবার সকালে শহরের প্রধান সড়ক আবদুল হামিদ রোডে প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহিলা পষিদ পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি, আমরা পারি জোটের সদস্যসচিব আবদুর রব মন্টুসহ অনেকে। কলেজছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি করে বক্তারা বলেন, সরকার দোষীদের এমন শাস্তির ব্যবস্থা করবে, যাতে আর কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।