বাংলাদেশে আটক শিক্ষাথীের্দর জামিন : কঠোর সরকার হঠাৎ নমনীয় কেন?

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:২৭

যাযাদি রিপোটর্
বাংলাদেশে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের জের ধরে যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। খ্যাতিমান ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম এখনো জামিন না পেলেও মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহŸায়ক লুৎফুন্নাহার লুমার। অথচ কিছুদিন আগেই ব্যাপক অভিযান চালিয়ে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করে নানা অভিযোগে তাদের নামে মামলাও দেয়া হয়েছিল। তাহলে আবার হঠাৎ করেই তাদের প্রতি নমনীয়তা দেখানোর কারণ কী? আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসি’কে বলছেন কোনো চাপ বা রাজনীতি নয়, বরং মানবিক কারণেই আটককৃতদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেনি সরকার পক্ষের কেঁৗসুলিরা। এর মধ্যে আর কোনো রাজনীতি ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিদের্শনা দিয়েছিলেন আটককৃতরা আবেদন করলে যেন জামিনের বিরোধিতা না করা হয়, যাতে তারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারে। তবে মামলা তদন্ত চলছে। তদন্ত অনুযায়ী মামলা চলবে।’ কিন্তু ব্যাপক অভিযানে গ্রেপ্তারের পর আবার হঠাৎ জামিনে মুক্তির এই নমনীয়তার কারণ কী? জবাবে আনিসুল হক বলেন, এ সরকার জনগণের সরকার। জনগণের যেভাবে সুবিধা হবে সেটাই সরকার করবে। এখানে রাজনীতি বা অন্য কিছু নেই। তবে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলতি বছরের শুরু থেকে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষাথীর্ বলেন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন- শিক্ষাথীের্দর দুটি আন্দোলনকেই সরকার নিজেই রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেও পারেনি আর সে কারণেই শুরুতে কঠোরতা দেখালেও জনমত বিবেচনা করেই আটককৃতদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকার এ আন্দোলন রাজনৈতিক ভেবে ভুল করেছে। সরকার যে আসলে কঠোর জায়গা থেকে নরম হয়েছে সেটা সবাইকে স্বস্তি দিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠকদের বেশির ভাগকেই আটক করা হয়েছিল গত মাসেই। এর মধ্যে ২৯ জুলাই বাস চাপায় দু’স্কুল শিক্ষাথীর্র মৃত্যুর পর গড়ে ওঠে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অধর্শত মামলায় প্রায় ১০০ শিক্ষাথীের্ক আটক করা হয়। পরে অনেকের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় সব মহলেই। তাদের আটকের প্রতিবাদে সোচ্চার হন অনেকেই। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে শক্ত অবস্থান দেখা গেলেও পরে সে অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। ফলে আটক শিক্ষাথীের্দর অনেকেই পরে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, জনমত আর সামনে নিবার্চনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিই সরকারকে বাধ্য করেছে আটক শিক্ষাথীের্দর প্রতি নমনীয় হতে। তিনি বলেন, যেভাবে শিক্ষাথীের্দর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাতে সরকারই ঝুঁকিতে পড়ে গেল। এ ঝুঁকি যেন আর না বাড়ে কিংবা এটি সামনের নিবার্চনে যেন কোনো প্রভাব না ফেলে আমার মনে হয় সেটিই সরকার বিবেচনায় নিয়েছে। যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্পষ্টভাবেই বলেছেন শিক্ষাথীের্দর জামিনে মুক্তির বিষয়টি নিতান্তই মানবিক, এর সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনীতি নেই। তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় আটক হওয়া ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম এখনো কারাগারেই রয়েছেন। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করা।