জাকাত আদায়কারীর সম্পদ বৃদ্ধি পায়

প্রকাশ | ১২ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় দারিদ্র্যবিমোচনে জাকাতের গুরুত্ব সর্বাধিক। কেননা ধর্মীয় এ বিধানে ধনীদের সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্রের মাঝে বণ্টন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা দারিদ্র্যবিমোচনে চূড়ান্ত ভূমিকা পালনে অত্যন্ত সহায়ক। তাই ইসলামে বিত্তশালীর সম্পদের নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের হক হিসেবে পরিশোধ করার কঠিন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল-কোরআনে বারংবার নামাজ কায়েমের পরেই জাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, 'সালাত কায়েম করো এবং জাকাত আদায় করো।' (সুরা আল-বাকারাহ : ৪৩, ৮৩, ১১০ ও ২৭৭ আয়াত; সুরা আন-নিসা ৭৭ ও ১৬২ আয়াত; সুরা আন নুর : ৫৬ আয়াত; সুরা আল-আহজাব ৩৩ আয়াত, সুরা মুজ্‌জাম্মিল : ২০ আয়াত) আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, 'তাদের অর্থসম্পদ থেকে জাকাত উসুল করো যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।' (সুরা আত?-তাওবা : ১০৩ আয়াত)। 'মুশরিকদের জন্যে রয়েছে ধ্বংস, তারা জাকাত দেয় না।' (সুরা হামিম : ৬-৭ আয়াত)। 'আলস্নাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমরা যে জাকাত দাও মূলতঃ তা জাকাত দানকারীরই সম্পদ বৃদ্ধি করে।' (সুরা আর-রুম : ৩৯ আয়াত) কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, জাকাতের বিধান বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম মানা সম্ভব নয়। আর পূর্ণ মুমিন হওয়ার জন্য ইসলামের যাবতীয় বিধান মানা অবশ্যক। আলস্নাহ তা'আলা বলেন, 'তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ইমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ব্যতীত তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? কিয়ামত দিবসে তাদেরকে কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা করো, আলস্নাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।' (বাকারাহ : ৮৫)। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, জাকাত জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। 'জান্নাতের মধ্যে এমন সব (স্বচ্ছ) ঘর রয়েছে যার বাইরের জিনিসসমূহ ভিতর হতে এবং ভিতরের জিনিসসমূহ বাহির হতে দেখা যায়। সে সব ঘরসমূহ আলস্নাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন যে ব্যক্তি (মানুষের সঙ্গে) নম্রতার সঙ্গে কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে (জাকাত আদায় করে), পর পর সিয়াম পালন করে এবং রাতে সালাত আদায় করে অথচ মানুষ তখন ঘুমিয়ে থাকে।' নবী করিম (সা.) আরও বলেন, 'আলস্নাহ তায়ালা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে সদকা (জাকাত) ফরজ করেছেন। যেটা ধনীদের কাছ থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রের মাঝে বণ্টন হবে।' ধনীদের সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের মাঝে বণ্টনের মাধ্যমেই কেবল দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব। সুদভিত্তিক অর্থনীতি কখনোই দারিদ্র্য দূর করতে পারে না। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণের দোহাই দিয়ে যে দেশে যত সুদভিত্তিক অর্থনীতি চলছে সে দেশে তত দরিদ্রের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, 'আলস্নাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আলস্নাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।' (বাকারাহ : ২৭৬) অতএব জাকাত আদায় করলে এবং দান করলে সম্পদ কমে যায় না। বরং তা বৃদ্ধি পায়। যে কোনো মাধ্যমে আলস্নাহ তার রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। কেউ যদি জাকাত ওয়াজিব হওয়াকে অস্বীকার করে তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা কুরআন ও সন্নাহ দ্বারা জাকাত ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে কেউ যদি জাকাত ওয়াজিব হওয়াকে স্বীকার করে কিন্তু অজ্ঞতাবশত অথবা কৃপণতার কারণে জাকাত আদায় না করে তাহলে সে কবিরা গুনাহগার হবে। তবে ইসলাম থেকে বের হবে না। আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'কিন্তু যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দিবে; নিশ্চয়ই আলস্নাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (তওবা : ৫) আবু বকর (রা.) জাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলেছিলেন, 'আলস্নাহর কসম! যদি তারা একটি মেষ শাবক জাকাত দিতেও অস্বীকৃতি জানায় যা আলস্নাহর রাসুলের (সা.) কাছে তারা দিত, তাহলে জাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করব।' জাকাত পরিত্যাগকারীর পরিণাম উলেস্নখ করে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে এবং তা আলস্নাহর পথে ব্যয় না করে তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। আর বলা হবে, এটাই তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জিভূত করেছিলে তা আস্বাদন করো।' (তওবা : ৩৪-৩৫)। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, 'যাকে আলস্নাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা (বিষের তীব্রতার কারণে) বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু'পাশে কামড়ে ধরে বলবে, 'আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল।' হাদিসে এসেছে জাকাত ত্যাগকারী শুধু আখিরাতেই নয় দুনিয়াবি শাস্তিরও মুখোমুখি হবে। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, 'যে জাতি জাকাত দেয় না, আলস্নাহ তাদের উপর বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন।' সারা বছর জাকাত আদায়ের সুযোগ থাকলেও রমজানের শেষ সময়ে এসে অধিকাংশ বিত্তশালী মুসলমান জাকাত আদায় করে থাকেন। কেননা রমজানে আদায়কৃত জাকাতের সওয়াব ৭০ গুণ। জাকাত আদায় রমজানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলেও সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়ার আশায় বিপুলসংখ্যক বিত্তবান মুসলমান এ মাসটিকে জাকাত আদায়ের জন্য বেছে নেন। এতে সিয়াম সাধনার সঙ্গে আরেক মাত্রা যোগ হয়। অভাবী ও দুস্থ মানুষের প্রতি সমবেদনা প্রকাশের মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির খোদায়ী বিধান পালনের সুযোগ তৈরি হয়।