পোশাক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কতটা?

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মালিকপক্ষকে কারখানা চালানোর অনুমতি দিলেও অর্ধশতাধিক শ্রমিক আক্রান্ত হওয়ার পর তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিজিএমইএর তৈরি প্রটোকল বা স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী কারখানা চালানোর নির্দেশের পরেও সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি; একাধিক কারখানায় যোগ দেওয়া অনেক শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কারখানা চালুর বিরোধিতাকারী শ্রমিক অধিকার কর্মীরা বলছেন, তারা যেমনটা আশঙ্কা করেছিলেন, তেমনটাই হয়েছে; পোশাক খাতের কারখানা চালু করার পর ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আন্দোলনের সভাপতি তাসলিমা আক্তার বলেন, 'মালিকপক্ষ যে প্রটোকল তৈরি করেছে আমরা তার বাস্তবায়ন দেখলাম না। প্রটোকল মানা হলে সুস্থ শ্রমিকদের সঙ্গে কোভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কী করে?' গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে চালু হয়েছে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আক্রান্ত হয়েছে। কাজে যোগ দেওয়ার আগে নিজ নিজ জেলায় নমুনা পরীক্ষা করাতে দিয়েছিলেন অনেকে। সেসব পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার আগেই শ্রমিকরা কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। বিজিএমইএর একাধিক শীর্ষনেতা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর সদস্যভুক্ত ২ হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে ২৫ শতাংশই কাজের অভাবে চালু হতে পারেনি। বাকি যারা কাজ করছেন তাদের শ্রমিক উপস্থিতিও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের বেশি নয়। অনেক কারখানাতেই জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর কাজ থাকবে না। বিদেশি ক্রয়াদেশ থাকাসাপেক্ষে বর্তমানে এর সদস্যভুক্ত যেসব কারখানা চালু রয়েছে তাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ইসু্যগুলো পালন করা হচ্ছে কিনা তা তদারকিতে কাজ করছে অন্তত ছয়টি দল। তবে এই দলে কারা রয়েছেন সংগঠনের একাধিক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নাম পাওয়া যায়নি। প্রথম পর্যায়ে কেবল কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের দিয়ে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সেই নিয়মটিই ভঙ্গ করা হয়েছে অনেক স্থানে। দূরের জেলাগুলো থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করিয়েছে কিছু কিছু কারখানা। আর এসব শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বহন করে নিয়ে এসেছেন করোনাভাইরাস। ফলে সুস্থ শ্রমিকদের মাঝে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতা দাবি করছেন, মালিকপক্ষ সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার কথা শোনালেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। ফলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে আশঙ্কা সবাই করেছিলেন শ্রমিকরা তা থেকে রক্ষা পায়নি। ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে দেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানা অবস্থিত। গত ১৫ দিনে এসব এলাকার কারখানাগুলোতে যেসব কোভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিক পাওয়া গেছে চাকরি বাঁচাতে তাদের অধিকাংশকেই ভাঙতে হয়েছিল স্বাস্থ্যবিধি। এক্ষেত্রে অনেক কারখানায় তৈরি হয়েছে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি। বিজিএমইএর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের হিসেবে, ১২ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানাগুলোতে ৫৫ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ৪৩ জন এবং মহিলা ১২ জন। তবে তাসলিমা আক্তার বলেন, তারা প্রায় ২৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, গত ৭ মে পর্যন্ত সারাদেশে ৯৬ জন পোশাক শ্রমিক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। ১২ মে পর্যন্ত সময়ে এই সংখ্যাটি একশ ছাড়িয়ে গেছে। গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান ইসমাইল এই তথ্য তুলে ধরে বলেন, এতে প্রমাণ হয় কারখানাগুলো প্রটোকল কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মান্য করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কারখানা চালুর মাধ্যমে আমাদের আশঙ্কা মতে এই মহামারি আরও ছড়িয়েছে। কারখানার স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিক খতিয়ে দেখতে বিজিএমইএর ছয়জন পরিচালকের নেতৃত্বে একাধিক প?র্যবেক্ষক দল গঠন করা হয়েছে। গত ১০ মে বিজিএমইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন ৪৯টি কারখানা পরিদর্শন করে তারা ৪৮টিকেই সন্তোষজনক পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করতে দেখেছেন। এছাড়া মোট ৪৬১টি কারখানা পরিদর্শন করে ৪৪১টিকে সন্তোষজনক পর্যায়ে পেয়েছেন। এছাড়া উত্তরায় সংগঠনের স্থায়ী কার্যালয়ে একটি হটলাইন সেন্টার চালু করেছিল সংগঠনটি। সেখান থেকে টেলিফোনে শ্রমিকদের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরামর্শগুলো দেওয়া হচ্ছে বলে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানান হয়। এর বাইরে প্রায় এক লাখ শ্রমিককে টেলিফোনে স্বাস্থ্যসেবা দিতে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খবর দিয়েছে বিজিএমইএ। গত ৯ মে বিজিএমইএর জানায়, বিজিএমইএর আশুলিয়া হেলথ সেন্টারে কারখানা সংশ্লিষ্টদের নমুনা সংগ্রহ করে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য দু'জন টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৩ মে থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে নমুনা সংগ্রহ কাজ। কিন্তু ১৩ তারিখেও সেই সেবাটি চালু হয়নি। নমুনা সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা জানান, ১২ মে পর্যন্ত এনিয়ে তিনি কোনো অগ্রগতির খবর পাননি। ১৩ তারিখে নমুনা সংগ্রহের কাজটি শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে শুনেছেন।