নতুন ডিজির যোগদানে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের কালক্ষেপণ

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
গত ২৫ মার্চ মাদ্রাসা অধিপ্তরের নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। পোস্টার ক্যাডারের কর্মকর্তা সফিউদ্দিন আহমদের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তাকে পলস্নী উন্নয়ন সমবায় বিভাগে বদলি করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ বু্যরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমিনকে পদায়ন করা হয়। দেড় মাসের বেশি হলেও নতুন মহাপরিচালককে যোগদান করতে দিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং মাদ্রাসা অধিদপ্তরের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে, সদ্য এমপিও হওয়া শিক্ষকদের এমপিও কাজ শুরু হওয়ায় বড় ধরনের একটি লেনদেন হাতিয়ে নিতে নতুন ডিজিকে যোগদান করতে দিচ্ছে না তারা। তাদের সাথে তাল মিলিয়েছে বদলির অর্ডার হওয়া ডিজি এবং শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের কিছু কর্মকর্তা। \হসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৫ মার্চ নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর তিনি যোগদান করতে গিয়েও নানা জটিলতায় পারেননি। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল তিনি জনশক্তি, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ বু্যরো থেকে অবমুক্ত হয়ে একই দিনে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে যোগদানের জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করেন। সচিব সেটি মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠালে ১৫ দিনেও তার যোগদানের অনুমতি মিলেনি। তার আবেদনটি শিক্ষা উপমন্ত্রী হয়ে মন্ত্রীর টেবিলে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বদলি হওয়া ডিজি অবমুক্ত হওয়ার জন্য কোনো আবেদন না করায় একই ফাইলে তার অবমুক্ত বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়েছে। নতুন ডিজিকে যোগদানপত্র না দিয়ে আগের ডিজিকে পুনর্বহাল করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদবির করছেন শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের একটি গ্রম্নপ। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অনুরোধ করে বলা হয়, সদ্য অর্ডার হওয়া সফিউদ্দিনের চাকরির মেয়াদ আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এ অবস্থায় তাকে যেন ওই দপ্তরে রাখা হয়। তবে জনপ্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেয়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও তার দপ্তরের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নতুন ডিজির যোগদান গ্রহণ না হওয়ায় তার বেতন ও ঈদের বোনাস আটকে গেছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে নতুন মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কে এম রুহুল আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, তিনি গত ২৭ এপ্রিল যোগদান করার জন্য আবেদন করেছেন। ফাইলটি কোন অবস্থায় আছে তা তার জানা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, এ কারণে তিনি ঈদের বোনাস পাননি। যোগদান নিয়ে কোনো জটিলতা আছে কি? এমন প্রশ্নে বিব্রতবোধ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন। কারিগরি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মাদ্রাসা অধিদপ্তরের প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাদের যোগদান গ্রহণ করা এবং বদলির ছাড়পত্র দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এতে চরম সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে দুই বিভাগের মধ্যে। এ বিভাগের শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে উঠলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না কারিগরি বিভাগ। কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ড এবং অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ দেওয়ার পর তাদের ব্যাপারে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনসী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, নতুন ডিজির যোগদানপত্রের আবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। জানা গেছে, মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, সুপার নিয়োগ কমিটিতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মকর্তা থাকতেন সেটি ডিসি-ইউএনওর কাছে যাওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের একটি স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। নিয়োগ কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে গিয়ে বড় অংকের লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করার গুরুতর অভিযোগ উঠে অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরপর সেই ক্ষমতা চলে যায় ডিসিদের কাছে। মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনায় বাস্তবায়ন হওয়ায় এক মাসের মাথায় সেই অর্ডার বাতিল করে ফের ক্ষমতা পায় অধিদপ্তর। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি দেয় দেশের প্রায় জেলার প্রশাসকরা (ডিসি)। এর মধ্যেই বিতর্কিত ডিজি সফিউদ্দিনকে বদলি করা হয়। এখন সেই বদলি ঠেকাতে তৎপর হয়েছে পুরানো সিন্ডিকেট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাদ্রাসার শীর্ষ পদ চারটি পদে নিয়োগ দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ একটি গ্রম্নপ নানা ধরনের বাণিজ্যে লিপ্ত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মাদ্রাসা অধিদপ্তরের শিক্ষা ক্যাডারের একজন উপ-পরিচালক এবং একজন সহকারী পরিচালক। সারাদেশ থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর উপ-পরিচালককে বদলি করলেও অদৃশ্য কারণে এখনো তিনি রয়েছেন অধিদপ্তরে। নানা চেষ্টায় এ বলয় ভাঙাতে না পেরে ডিসি-ইউএনওদের মাধ্যমে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ।