২৭০ বছরের ঈদের জামাত বন্ধ হলো শোলাকিয়ায়

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনা বদলে দিচ্ছে ২৭০ বছরের ইতিহাস। ১৯১ বছর আগে শুরু হয়েছিল ঈদের বড় জামাত। এরও ২০০ বছর আগে থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর নানা প্রতিকূল সময় কেটেছে। কিন্তু ঈদের জামাতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে এবার প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান খালি থাকছে ঈদের দিনেও। থাকছে না সেই চিরচেনা কোলাহল। লাখো মানুষের মুখরতা। চলমান করোনা মহামারিতে এবার হচ্ছে না দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত। করোনা বিস্তার রোধে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সে পরিপ্রেক্ষিতে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ১৯৩তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈদগাহ কমিটির সভা করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির সভাপতি হিসেবে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ইমাম-ওলামাদের সঙ্গে মিটিং করা হবে। প্রতি বছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসলিস্ন একসঙ্গে শোলাকিয়ার বিশাল প্রান্তরে নামাজ পড়েন। এখানে একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল প্রান্তরে সব মুসলিস্ন যাতে নামাজ শুরুর মূহূর্তটি জানতে পারেন এ জন্য নামাজ শুরুর আগে বেশ কয়েকবার বন্দুকের গুলি ছোড়া হয়। সব শেষ জামাত শুরুর এক মিনিট আগে গুলি ছুড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি ঘোষণা করা হয়। লাখো মুসলিস্নর নিরাপত্তায় নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী,র্ যাব, পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকে মাঠের চারপাশে। জামাত ঘিরে পুরো শহর যানবাহনশূন্য করে সাজানো হয় ট্রাফিকব্যবস্থা। আকাশে নজরদারি করে উন্নত ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন। দূরের মুসলিস্নদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার থেকে চলাচল করে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। তবে এবার সব আয়োজন থামিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য করোনা। জানা গেছে, বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপশালী বীর ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ্‌ করেন। তারও দুশ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উলেস্নখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে। ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসলিস্ন একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় 'সোয়ালাখিয়া', যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত। ২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন বেশ কয়েকজন। তবু থেমে থাকেনি ঈদের জামাত। তবে এই প্রথমবারের মতো ঈদের দিনেও নীরব থাকছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া।