ভূতনেতা ওরাটং ভূতম

প্রতিটি রাস্তায় আলো জ্বালিয়ে রাখার ব্যবস্থা করল। বিল-ঝিলের পচা মাছ ভূতের খাদ্য। সেগুলো পচে যাওয়ার আগেই ধরে ফেলল মানুষ সমাজের জেলেরা। এভাবে ভূতরা বসবাস করার জায়গা হারাতে থাকল। খাবার হারাতে লাগল। দিশেহারা হয়ে গেল ভূতরা। অসহায় ভূতগুলো কোনো এক অমাবস্যার রাতে ভূতনেতার বাড়িতে গিয়ে জড়ো হলো

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

নুরুল ইসলাম বাবুল
আজ অমাবশ্যার রাত। চারিদিকে ঘন অন্ধকার। ঠিক বারোটা এক মিনিটের সময় ভূতদের মিটিং বসলো। মিটিং বসলো ভূতনেতার বাড়ির ছাদে। ওরাটং ভূতম হলেন ভূতদের নেতা। তিনি বসবাস করেন পুরনো শহরের একটি পোড়ো বাড়িতে। এই বাড়িটিতে এক সময় বাস করতেন বনেদি এক জমিদার। তার ছিল অনেক লোকজন। কিন্তু তারা দেশ ছাড়া হয়ে চলে গেছেন অন্য দেশে। সেই থেকে শূন্য পড়ে আছে বাড়িটি। অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। ঝোপঝাড় দিয়ে ঢেকে গেছে বাড়ির পুরো অংশ। লোকজন ভয়ে কেউ এদিকে আসে না। তাই ওরাটং ভূতম বেশ আরামে বসবাস করছেন এই বাড়িতে। এখান থেকেই তিনি পুরো দেশের ভূত সমাজ পরিচালনা করে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরে। তিনি একা নন। তার সহযোগী আছে আরও বেশ কয়েকজন পুরনো ভূত। আর আছে হাজার হাজার সৈন্য ভূত। লাখ লাখ লাঠিয়াল ভূত। কোটি কোটি স্বেচ্ছাসেবক ভূত। তাদের সহযোগিতায় ওরাটং ভূতম এতদিন খুব সুন্দর করে পরিচালনা করে আসছিলেন পুরো ভূতের রাজ্য। কিন্তু আজকাল কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু সমস্যার কথা ভূত নেতার কানেও এসেছে। এই বিষয় নিয়েই আজ রাতের মিটিং। মিটিংয়ের সভাপতি ওরাটং ভূতম। তিনি নিজেই উপস্থিত ভূতদের কাছে জানতে চেয়ে বললেন, আপনারা এক এক করে সমস্যার কথা বলুন। ভূতনেতার কথায় দাঁড়াল ছোটখাটো একটা ভূত। সে এতটাই খাটো যে, দাঁড়ানোর পরেও অন্য ভূতদের হাঁটুর নিচে পড়ে রইল। ভূতনেতা তাকে দেখতে না-পেয়ে উঠে দাঁড়ালেন। খাটো ভূত অভিযোগের সুরে বলল, ওই লম্বু ভূতটা সব সময় আমাকে খাটো বলে ভর্ৎসনা করে। খাটো ভূতের অভিযোগ শেষে দাঁড়াল লম্বা ভূত। সে এতটাই লম্বা যে ভূতনেতাসহ সবাই উপরের দিকে তাকিয়েও তার মুখটা ভালো করে দেখতে পেল না। লম্বা ভূত পাল্টা অভিযোগ করে বলল, মহামান্য ভূতনেতা, আপনি নিজ কানেই শুনতে পেলেন ওই খাটো ভূতটা আমাকে লম্বু বলে জ্বালাতন করে। এবার অন্যপাশ থেকে আরেকটি ভূত দাঁড়িয়ে বলল, আমি কানা বলে ওই ল্যাংড়ার বাচ্চা ল্যাংড়া ভূতটা আমাকে কানু বলে বিদ্রম্নপ করে। ল্যাংড়া ভূতটাও দাঁত কটমট করে জবাব দিল। পেছন থেকে আরেকটা ভূত বলল, আমার লেজ নেই বলে কাঁধকাটা ভূতটা আমাকে দিনরাত ভেংচি কাটে। কাঁধকাটা ভূতও পাল্টা জবাব দিল। এবার একেবারে সামনে থেকে অভিযোগ করল নিরীহ এক ভূত। সে বলল, ওই শাকচুন্নিটা আমার বাগানের সবকিছু চুরি করে খেয়ে ফেলে। নিরীহ ভূতের কথায় সমস্ত ভূত শাকচুন্নির দিকে তাকাল। শাকচুন্নি এককোটি বত্রিশখানা দাঁত বের করে হাসতে লাগল। আরেক পাশ থেকে বুড়ো ভূতটা দাঁড়াতে না পেরে বসে থেকেই বলল, ওই পিচ্চি ভূতগুলো আমাদের কোনো সম্মান করে না। ভূত সমাজ থেকে আদাব-কায়দা সব উঠে যাচ্ছে। চারদিক থেকে বাচ্চা ভূতগুলো হইচই করে উঠল। এভাবে একের পর এক অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ চলতে থাকল। ওরাটাং ভূতম সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তারপর তার পাশে বসা পুরনো ভূতদের সঙ্গে পরামর্শ করে উঠে দাঁড়ালেন। ভূতনেতা বললেন, তোমাদের সমস্যাগুলো খুবই ছোটখাট বিষয় নিয়ে। তোমরা একে অপরের প্রতি সম্মান করতে শেখো। আরও ধৈর্যশীল হও। অন্যের জিনিস চুরি করাটাও ভালো কাজ নয়। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ভূত সমাজের কেউ টিকে থাকতে পারবে না। ভালো হয়ে, সবাই ভালো থাকো। জয়তুম ভূতম। এই বলে মিটিং শেষ করলেন ওরাটং ভূতম। ভূতনেতার কথা কেউ কানে তুলল কিনা বোঝা গেল না। তবে ভূত সমাজের কোনো উন্নতি হলো না। দিনের পর দিন নানারকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলল ভূতগুলো। ভূতনেতার সহযোগী ভূত, সৈন্যভূত, লাঠিয়াল ভূত নানাভাবে চেষ্টা করেও ভূতদের ভালো করা গেল না। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেল গাছপালা, পশুপাখি, খালবিল, আকাশ-বাতাস। এভাবে চলতে থাকায় রেগে উঠল মানুষ সমাজের মানুষ। তারা ভূতের ভুতুড়ে কান্ড দূর করার জন্য প্রস্তুত হলো। মানুষ ভূতের আস্তানাগুলো ভেঙে দিতে লাগল। পোড়োবাড়িগুলো পরিষ্কার করা শুরু করল। প্রতিটি রাস্তায় আলো জ্বালিয়ে রাখার ব্যবস্থা করল। বিল-ঝিলের পচা মাছ ভূতের খাদ্য। সেগুলো পচে যাওয়ার আগেই ধরে ফেলল মানুষ সমাজের জেলেরা। এভাবে ভূতরা বসবাস করার জায়গা হারাতে থাকল। খাবার হারাতে লাগল। দিশেহারা হয়ে গেল ভূতরা। অসহায় ভূতগুলো কোনো এক অমাবস্যার রাতে ভূতনেতার বাড়িতে গিয়ে জড়ো হলো। ভূতনেতাকে খুবই বিষণ্ন দেখাল আজ। ভূত সমাজের দুরবস্থায় খুব কষ্ট পেয়েছেন তিনি। অনেক দুঃখ নিয়ে ওরাটং ভূতম আগের দিনের মতোই বললেন, একে অন্যের প্রতি সদয় হও। ভালো হয়ে, সবাই মিলে ভালো থাকো। জয়তুম ভূতম।