তুমিই হবে সেরা মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী

বই তোমাদের সামনে খুলে দেয় নতুন দুয়ার। কখনো তোমাদের ভাবনাকে করে প্রশ্নবিদ্ধ। আবার ভাবতে বাধ্য করে নতুন করে। নিজের চারপাশের বাইরের যে কত ধরনের জীবন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আছে, বই পড়লেই তা অনুভব করা যায়। একটি ভালো বই মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতিশীল হওয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিকালবেলা তোত্তোচান বইটা পড়ছিল তুবা। হঠাৎ করে ঘরে ঢুকল শিহাব। শিহাব তুবার ছোট ভাই। অন্য বই পড়া দেখে- শিহাব তুবা আপুকে বলল, দাঁড়া, 'এখনই আম্মুকে বলে দিচ্ছি। তুই স্কুলের বই না পড়ে অন্য বই পড়ছিস।' শুনেই ভয় পায় তুবা। চট করে বইটা বন্ধ করে ফেলে ও। এমন সময় সেখানে চলে আসে রানা মামা। রানা মামা শিহাবকে উদ্দেশ করে বলে, 'কী হয়েছে ভাগিনা? মনে হচ্ছে, আপুকে বস্ন্যাকমেল করার চেষ্টা করছো? কী বলে দেবে আম্মুকে?' শিহাব অতি আগ্রহ নিয়ে মামাকে বলে, 'দেখো মামা, ও স্কুলের বই ছেড়ে অন্য বই পড়ছে।' 'দেখি, দেখি!' বলেই মামা বইটা হাতে তুলে নেয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে আবার বলে, 'দারুণ তো! তুমি এই বই কোথায় পেয়েছো? তুবা বলে, 'মামা, আমাদের স্কুলে একটা বইয়ের গাড়ি আসে। সেই গাড়িতে থাকে অনেক বই। গাড়িটার নাকি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি।' তুবা পড়ে ক্লাস নাইনে। আর শিহাব ক্লাস সেভেনে। দুই ভাইবোন সারাদিন ঝগড়া করে। সারাটাদিন আম্মুর কাছে ওরা অভিযোগ করে। আম্মুকে ভয়ও পায় দুজনেই। সেই আম্মু এবার ওদের সামনে। আম্মু বলে, 'কী হয়েছেরে রানা?' 'আরে বুবু দেখো। তোমার মেয়ে তো সেরার সেরা হয়ে যাবে। ও এখন গল্প-উপন্যাসের বই পড়তে শিখেছে।' আম্মু মামার হাতে বইটা দেখে কড়া চোখে তাকায় তুবার দিকে। বলে, 'এই বই তোমাকে পড়তে কে বলেছে?' তুবা ভয়ে চুপ করে থাকে। তুবাকে সাহস জোগানোর জন্য রানা মামা বলে, 'অন্য বই পড়ছো ভালো কথা। ক্লাসের পড়া কিন্তু আবার ঠিক রাখতে হবে।' বলেই একটু থেমে যায় রানা মামা। একটু পরে তুবার আম্মুকে উদ্দেশে করে আবার বলতে শুরু করে মামা, 'শোন বুবু, যে বা যারা যতবেশি বই পড়ে, তার কল্পনা শক্তি ততবেশি বৃদ্ধি পায়। যদিও আমাদের অনেকেরই বই পড়ার প্রবণতা অনেক কম। তবে সবার যে বাধ্য হয়ে পাঠ্যবই পড়া লাগে তা বলার প্রয়োজন নেই। সেই হিসেবে বলা যেতে পারে আমরা সবাই বই পড়ি। তবে সেই বই পড়া যে আমাদের কতটা আনন্দ দিয়ে থাকে সেটা প্রশ্নই থেকে যায়। কেননা, বই পড়ার কারণে প্রধান যে প্রভাব আমাদের মনে পড়া উচিত তা হচ্ছে 'আনন্দ' অনুভব করা। আর, আমার মনে হয় না যে জোর করে পাঠ্যবই পড়ে কেউ সেই আনন্দ অনুভব করে।' তুবার আম্মু বলে, 'জোর করেই পড়ুক আর মন থেকেই পড়ুক, পড়তে তো হবেই। আর পাঠ্যবই না পড়লে উপরের ক্লাসে যাবে কীভাবে? আর উপরের ক্লাসে না গেলে শিক্ষিত হবে কী করে?' রানা মামা বলে, 'এটা তুমি ঠিকই বলেছ। তবে পাঠ্য বইয়ের পড়ার ফাঁকে অবসর সময়ে একটু একটু করে গল্প, ছড়া, উপন্যাসের বই পড়তে হবে। আর এই বই পড়ার আনন্দটা তখন পাঠ্যবই পড়ার মাঝে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। তাছাড়া, পড়ার প্রতি মনোযোগও বাড়বে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন বই পড়া অবস্থায় সচল হয়ে ওঠে মানুষের মস্তিষ্ক। কল্পনা শক্তিও প্রখর হয়ে ওঠে। কল্পনার শক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেরা খুলে ফেলে নিজেদের আলাদা একটা পৃথিবী। সেই পৃথিবীতে নিজেদের ভালো- যা কিছু সব সাজিয়ে নেয় ইচ্ছে মতো। সেই সাজিয়ে নেয়া নিজেদের পৃথিবীটাকে সুন্দর করতে সেই প্রভাব বাস্তবেও নিজের মধ্যে ফেলানোর চেষ্টা করে। সফল হলেই সেই হয়ে যায় সেরাদের সেরা।' রানা মামা একটু থামে। তাকায় ভাগনা-ভাগনির দিকে। সবাই মনোযোগ দিয়ে মামার কথা শুনছে। মামা এটা বুঝতে পেরে খুশি হয়। রানা মামা অনুমান করছে তার বুবু মানে তুবার আম্মুও মনে হয় একটু নমনীয় পর্যায়ে নেমেছে। মামা এবার তুবা আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করে, 'বই তোমাদের সামনে খুলে দেয় নতুন দুয়ার। কখনো তোমাদের ভাবনাকে করে প্রশ্নবিদ্ধ। আবার ভাবতে বাধ্য করে নতুন করে। নিজের চারপাশের বাইরের যে কত ধরনের জীবন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আছে, বই পড়লেই তা অনুভব করা যায়। একটি ভালো বই মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতিশীল হওয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। অন্যের দুঃখ বুঝতে সাহায্য করে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক উন্নয়নেও দারুণ ভূমিকা রাখে। যারা প্রতিদিন বই পড়ে, তারা মানসিক সমস্যায় কম ভোগেন। বই পড়লে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আর আত্মবিশ্বাস বাড়লে সব কাজেই মনোযোগ বেড়ে যায় দ্বিগুণ আকারে। পড়াশোনাসহ করে কঠোর পরিশ্রমও। ফলে, ফলাফল ভালো হওয়া নিশ্চিত করে তবেই থামে। কাজেই সেই তো হবে সেরাদের সেরা। কী শিহাব মামা তুমি সেরা হতে চাও না?' 'চাই মামা।' জবাব দেয় শিহাব। আম্মুর মুখে রাগের কোনো চিহ্ন নেই। কাজেই তুবাও খুব খুশি হয়। রানা মামা বলে, 'তুবা তো সেরা হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে। ও তো সেরা হবেই। ওই পথে পা বাড়াও, তুমিও হবে সেরা। বই পড়তে হবে, নিজেকে করতে হবে আলোকিত। আর একটা ছড়া মনে রেখো, বই পড়লেই বাড়বে জ্ঞান তুমিই হবে সেরা, তোমার ভুবন থাকবে সদা আলোক দিয়ে ঘেরা। বুঝেছো? 'জ্বী, মামা।' একসঙ্গে জবাব দেয় তুবা আর শিহাব।