বৈচিত্র্যময় শীতের প্রকৃতি

শীতকাল এলেই মনে পড়ে শিশিরভেজা গাঁয়ের মেঠোপথ, দূর্বাঘাসে শিশিরবিন্দুর মুক্তার মতো হাস্যোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি, অতিথি পাখিদের কোলাহলপূর্ণ মিলনমেলা, শীতকালীন পিঠাপুলি ও নানান স্টাইলের পোশাক পরিধান

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আনোয়ারুল ইসলাম
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বছরে ছয়টি ঋতুর পালাবদলে ফিরে আসে প্রকৃতির মিলনমেলা। গ্রাম বাংলার রূপ, সৌন্দর্য ও মায়ায়ভরা শীত ঋতু। এখানে প্রতিটি ঋতুই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। শীত ঋতু তার ব্যতিক্রম নয়। শীতকাল এলেই মনে পড়ে শিশিরভেজা গাঁয়ের মেঠোপথ, দূর্বাঘাসে শিশিরবিন্দুর মুক্তার মতো হাস্যোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি, অতিথি পাখিদের কোলাহলপূর্ণ মিলনমেলা, শীতকালীন পিঠাপুলি ও নানান স্টাইলের পোশাক পরিধান। শীতের সকাল কনকনে ঠান্ডা ও ঘুন কুয়াশায় ঢাকা থাকে। সবকিছু জড়সড় হয়ে আসে, কোনো কিছু যেন দেখা যায় না। রাতে শিশির বিন্দু বৃষ্টির মতো টুপটুপ করে টিনের চালে পড়ে এবং ঘাস ও ক্ষেতের ডগায় মুক্তার মতো ঝলমল করে। হিম হিম ঠান্ডার প্রকৃতির সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। অধিক শীতে সবুজ প্রকৃতি রুক্ষ্ণ মূর্তি ধারণ করে। শীতের শুষ্কতায় অধিকাংশ গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। শীত তার শুষ্কতার রূপ নিয়ে প্রকৃতির ওপর জেঁকে বসে। শীতের তান্ডবে প্রকৃতি বিবর্ণ হয়ে পড়ে। কৃষকের প্রাণ প্রিয় ফসল পাকা ধানের মো মো ঘ্রাণে প্রাণ জুড়ে যায়। কৃষকের গায়কী গলায় ধান কাঁটার আনন্দের গানে পুরো মাঠ মুখরিত হয়ে ওঠে। কেউ গানের তালে তালে নাচে কেউবা গানের আনন্দে ধান কাটে। ধান কাঁটার শেষে পিঠা পুলি খাওয়ার ধুম পরে বাড়িতে বাড়িতে। ভাপা পিঠা, তেল পিঠা, পাটি সাপটা, মুঠ পিঠা, দুধ পিঠা ও চিতই পিঠা ইত্যাদি তেল, চিনি, গুড় ও চালের গুঁড়ার মিশ্রণে তৈরি হয়। এসব পিঠা খেতে যে কতো মজা, না খেলে কেউ তা বুঝবে না। এ সময়ে বাড়িতে নতুন ও পুরাতন জামাই ও আত্মীয়স্বজনের দাওয়াতের হিড়িক পড়ে। শীতকালের রজনীগন্ধার মন মাতানো সুবাস কার না ভালো লাগে? এ সময় বাগানে ও আঙ্গিনায় হরেক রকম ফুল ফোটে। তার মধ্যে গাদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী গোলাপ শোভাবধন করে থাকে। শীতকালের সরিষা ফুলের হলুদ ক্ষেত আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জনের দৃশ্য না দেখলে এই দৃশ্য কাউকে বোঝানো যাবে না। শহরের ফুলের দোকানগুলো বাহারি ফুলে ফুলে ভরে যায়। শীতকালেই বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথি বরণ করতে ফুলের দোকানগুলোতে নানা রকম ফুলের মালা ও ফুলের তোড়া বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। শীতের সকালে গ্রামে কনকনে ঠান্ডা নিবারণে মোটা কাপড়-চোপড়ের ব্যবহার বেড়ে যায়। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসে কনকনে শৈত্য প্রবাহ, যা নিবারণের জন্য, বৃদ্ধ যুবা সবাই মোটা কাপড় পরিধান করে এবং গনগনে আগুনে হাত-পা গরম করে ঠান্ডা নিবারণ করে। এ সময়ে দানশীল ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দুস্থ ও গরিবদের শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। আমাদের দেশে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে এই ঋতুতেই। সূদুর সাইবেরিয়া থেকে অনেক অতিথি পাখি এদেশের হাওড়ে বাওড়ে ও জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। রংবেরংঙের পাখি দেখে মন ভরে যায় এবং পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রকৃতি। শীতকালীন ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধারা শীতজনিত জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, আমাশয় ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে অধিক আক্রান্ত হয়। এ সময়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা অধিক হারে বেড়ে যায়। এই ঋতুতেই মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং এসব রোগী হাট-বাজার, খোলা মাঠে ও অন্যান্য স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করে।