বোতলবন্দি ভূত

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

গাজী তারেক আজিজ
একদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত এক কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। পরিত্যক্ত একটি বাড়ি থেকে। ঝোপঝাড় লতাপাতায় ঘেরা। আঠারো শতকের শেষের দিকে কোনো এক হিন্দু জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করে রংমহল বানিয়েছিলেন বলে জানা যায়। জমিদার ছিল নিঃসন্তান। বার্ধক্য যখন ছুঁইছুঁই তখন সব সহায়সম্পদ ফেলে কলকাতায় নিকটজনের কাছে পাড়ি জমান সেই জমিদার। তখন থেকে পরিত্যক্ত এই বাড়ি ঘিরে অনেক কল্পকাহিনী ডালপালা গজিয়েছে। প্রায়শই বাড়িটি থেকে উদ্ভট সব শব্দ আসে। কখনো কখনো ডাকাতদল আস্তানা গেঁড়ে গা ঢাকা দেয়। যেহেতু লোকজনের আনাগোনা নেই তাই এই বাড়ি ডাকাতদের জন্য বেশ নিরাপদ। ডাকাত দলকে মাঝে মধ্যে জমিদাররাই লালনপালন করত বলেও জনশ্রম্নতি আছে। এই সন্দেহের কারণও বেশ পোক্ত। জমিদারদের সঙ্গে কেউ টক্কর দিতে চাইলে পরিণতি ভয়াবহ হতো। সেই বিদ্রোহী প্রজার লাশ মিলতো এই পরিত্যক্ত বাড়িতে। আশপাশে প্রচুর কঙ্কাল সেই সাক্ষ্য বহন করে। এখন জমিদারি প্রথা না থাকলেও অভিশপ্ত বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটি অনেকটা দুর্গের আদলে তৈরি। যুগযুগ ধরে বিভিন্ন কাহিনী শুনতে শুনতে মানুষের স্বাভাবিক বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের এই বাড়ির ভূতের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো হতো। আসা যাক, কান্নার শব্দের কারণ অনুসন্ধানে। অনেক ছোট বড় ভূত একত্রিত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে যা দেখল তা রীতিমতো ভয়ংকর! একটা ভূতের বাচ্চা ক্ষুধায় ছটফট করছে আর সিঁও সিঁও বলে কান্না করছে। ভূতরা তাদের মাকে সিঁও বলে। সব ভূত জড়ো হয়ে দেখে বাচ্চা ভূতটির গায়ে কোনো শক্তি নেই। দাঁড়াতেও পারছে না। তাই দেখে সবাই বুঝতে পারল বাচ্চাটি কিছুই খায়নি অনেক দিন পর্যন্ত। তাড়াতাড়ি করে অন্য ভূতরা কেউ খাবার, কেউ পানি, কেউ পানীয়, কেউ মরা মানুষের হাঁড় নিয়ে এলো। ভূতের বাচ্চাকে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে দ্রম্নত সুস্থ করে তুললো। তখন সব ভূত তার কাছে জানতে পারলো তার সিঁও খাবার আনতে যেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। ভূতের সাম্রাজ্যে মিটিং হয়েছে এই ভূতের সিঁওকে যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে। না হলে বাচ্চা ভূতটি মারা যাবে। যেই কথা সেই কাজ। তন্ন তন্ন করে অভিযান চালিয়ে খবর পাওয়া গেল তার সিঁওকে মানুষ নামের ইনসান বোতল বন্ধী করে মাটিতে পুঁতে রেখেছে। এই খবর যখন ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্ব থেকে দলে দলে ভূত সাম্রাজ্যের নেতৃস্থানীয় লোকজন জড়ো হতে লাগল। তাদের মধ্যে সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলো- যে করেই হোক মুক্ত করে আনবে তাদের গোত্রের সদস্যকে। যে মানুষ এই বোতল বন্ধীর কাজ করেছে তার ক্ষতি করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়। একেক দেশ থেকে বিশারদ নিয়ে এসে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় খনন কার্য চালানো হয়। দীর্ঘ ১০ দিন খুঁড়ে মাটির গভীর থেকে বোতলটি বের করে আনা হয়। বাচ্চা ভূতটি তার সিঁওকে দেখে খুব খুশি হয়। এদিকে মা ভূতটিরও প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাতাস এবং খাবারের অভাবে মারা যেত। তারপর ভূতরা একটা আধুনিক কাচ কাটার যন্ত্র দিয়ে কেটে ভূতটিকে অবমুক্ত করে। এই পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় বা যবনিকা ঘটে ভূতের বন্দিদশার।