বিল্টু ও অতিথি

সুন্দর 'পি পি পি' সুরে ডাকে বলে এদের বাংলা নাম জলপিপি রাখা হয়েছে। এরা 'দলপিপি' নামেও পরিচিত। এদের ইংরেজি নাম ইৎড়হুব ডরহমবফ ঔধপধহধ এবং বৈজ্ঞানিক নাম গবঃড়ঢ়রফরঁং রহফরপঁং. পাখিগুলো বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া যায়

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

ইমরান খান রাজ
বাবা-মায়ের খুব আদরের ছেলে রাফসান। সুন্দরবনের পাশেই তাদের বাড়ি। ভাইবোন না থাকায় বাবা-মায়ের সব আদর, ভালোবাসা আর খেলনাগুলো সবই তার একার। পড়ে ক্লাস থ্রি'তে। তবুও দুষ্টুপনায় ক্লাসের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। বাবা-মা আদর করে তাকে বিল্টু নামেই ডাকে। একবার স্কুল থেকে ফেরার পথে ছোট একটি বিড়ালের বাচ্চা দেখতে পায়। পরে সেটাকে বাসায় এনে লালনপালন করে সে। তারপর থেকে স্কুলের সব বন্ধুরাও তাকে বিল্টু নামে ডাকে। পশুপাখির প্রতি তার যেন আলাদা এক ভালোবাসা কাজ করে। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে, ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুতে বিল্টু মোটেও পছন্দ করে না। তারপরও মা তাকে রোজ সকালে উঠিয়ে, নাস্তা খাইয়ে, ড্রেস পরিয়ে স্কুলে পাঠায়। মা আজও বিল্টুকে একই নিয়মে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে পাঠালো। স্কুলে ঢুকেই দেখলো রতন স্যারের ক্লাস চলছে। বাংলা ক্লাস। সে চুপচাপ অনুমতি নিয়ে ঢুকে, বসে পড়লো তার বন্ধু রবিনের পাশে। স্যার আজকে বিভিন্ন পাখিদের নিয়ে আলোচনা করছে। দেশ ও বিদেশের কয়েকটি পাখির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। বিল্টু যেহেতু পশুপাখি প্রেমী। তাই খুব মনোযোগ দিয়ে আজকের ক্লাসটা করল। সব ক্লাস শেষে ছুটির ঘণ্টা বেজে ওঠে। ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই আনন্দ-উলস্নাসে স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়লো, বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে। রবিন ও বিল্টুর বাসা পাশাপাশি। তাই তারা রোজ স্কুল শেষ করে একসঙ্গে বাড়ি ফেরে। দু'জনে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল। হঠাৎ বিল্টুর চোখ পড়লো রাস্তার পাশের পুকুর পাড়ে। কৌতূহল নিয়ে পুকুর পাড়ের আম গাছের কাছে যেতেই দেখলো একটি পাখি মুমূর্ষু অবস্থায় বসে আছে। উড়তে কিংবা হাঁটতে পারছে না। ছোট বাচ্চা। হয়তো তার বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে। বিল্টু খুব আলতো করে ধরে পাখিটিকে তার বাসায় নিয়ে গেল। বাসায় ফিরে ব্যাগ রেখেই সোজা চলে গেল বাবার কাছে। দেখালো পাখির বাচ্চাটাকে। বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল পাখির বাচ্চাটিকে। মাথায় ধূসর রং দেখেই বিল্টুর বাবা বলে উঠলো, এটাতো জলপিপি। এরা আমাদের অতিথি পাখি। প্রতি বছর শীতকালে অনেক দূর থেকে আমাদের দেশে আসে আশ্রয় নিতে। অতিথি পাখি জলপিপি'র কথা শুনে বিল্টুর আগ্রহ বেড়ে গেল। সে বাবার কাছে আরও জানতে চাইল। তার বাবা বলল, জলাভূমিতে বিচরণকালে অদ্ভুত সুন্দর 'পি পি পি' সুরে ডাকে বলে এদের বাংলা নাম জলপিপি রাখা হয়েছে। এরা 'দলপিপি' নামেও পরিচিত। এদের ইংরেজি নাম ইৎড়হুব ডরহমবফ ঔধপধহধ এবং বৈজ্ঞানিক নাম গবঃড়ঢ়রফরঁং রহফরপঁং. পাখিগুলো বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া যায়। বাবার কাছে জলপিপির বিষয়ে জানার পর, সে সিদ্ধান্ত নিল যে, এই বাচ্চা জলপিপিটি সে লালনপালন করে বড় করবে। তারপর পাখিটির মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেবে। বিল্টুর কথা শুনে তার বাবা খুব খুশি হলো এবং বাজার থেকে পাখিটি রাখার জন্য একটা সুন্দর খাঁচা নিয়ে এলো। তারপর বিল্টুকে বলল, 'এটা তোমার অতিথি। তাই এটাকে খুব যত্ন করে রাখবে। কেউ যেন আমাদের দেশে আসা কোনো অতিথি পাখি শিকার না করে, সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখবে।' পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বিল্টু পুকুরের ছোট মাছ ও জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা এনে খেতে দিল পাখিটিকে। পাখিটি খাবার দেখে খুব মজা করে খেয়ে নিল সবটুকু। পরে সে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের কাছে জলপিপি'র কথা বলে বেড়াল। স্কুল ছুটির পর সব বন্ধুকে নিয়ে তার বাসায় এলো। বিল্টুর অতিথি পাখিটিকে দেখার জন্য।