কিছু কিছু মানুষ বিয়েই করতে চায় না। বিয়ে না আসলে তারা মূলত ভয় পায় কমিটমেন্টকে। রোগটির নাম গ্যামোফোবিয়া।
গ্যামোফোবিয়া কি? গ্রিক ভাষায় গ্যামো মানে বিয়ে আর ফোবিয়া মানে তো ভয় সকলেই জানেন। গ্যামোফোবিয়া হলো, বিয়ে কিংবা কোনো ধরণের স্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ভয়। যারা মানসিক ভাবে এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা আসলে নতুন সম্পর্ক নিয়ে আতংকে থাকেন, বিবাহিত জীবন নিয়ে একটা ভয় কাজ করে, নিজের ব্যাক্তি স্বাধীনতার জায়গাটুকু খর্ব হতে পারে কিংবা মানিয়ে চলা যাবে কিনা এধরণের একটা চিন্তায় থাকেন এই ধরণের ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষরা।
গ্যামোফোবিয়ার ব্যাপারটা হলো, এই রোগে যারা আক্রান্ত তারা প্রেম করেন, ভালবাসাও বুঝেন, কিন্তু যখনই সম্পর্কের মধ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি চলে আসে তখন আর এই রোগীরা এগুতে চান না। অনেক সম্পর্ক ভাঙ্গেই কেবল কমিটমেন্ট না থাকার কারণে।
তাই যদি আপনি দেখেন যে, আপনি যার সাথে সম্পর্ক করছেন তিনি বিয়ে কিংবা প্রতিশ্রুতির ব্যাপারগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন এটাকে ইস্যু করার আগে একবার দেখে নেবেন আপনার মানুষটি কি গ্যামোফোবিয়ায় ভুগছে কিনা। যদি সেটিই হয়, তাহলে সাইকোলজিস্ট দেখানো যেতে পারে।
কেনো হয় গ্যামোফোবিয়া? বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। ব্রোকেন ফ্যামিলিতে বেড়ে উঠা অনেকের মধ্যেই এই ফোবিয়া থাকতে পারে। তাদের হয়ত ধারণাই হয়ে যায় সম্পর্ক মানেই কোনো একদিন আর টিকে থাকবে না, ভেঙ্গে যাবে। আবার যেসব পরিবারে বাবা মা খুব ঝগড়া করেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাভাবিক সুর কেটে যায়, সেইসব পরিবারের অনেকেও গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারে।
অনেকক্ষেত্রেই এমন হয় সত্যিকারের প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ার পর অনেকেই মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙ্গে পড়ে যে, কাউকে আর তার আপন মনে হয় না। সে তখন কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারে না, অন্ত কমিটেড কোনো রিলেশনশীপের জন্য। আবার হীনমন্যতা কিংবা নিজের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অবসেশনে ভোগা মানুষদেরও গ্যামোফোবিয়া হতে পারে।
লক্ষণ- যাদের গ্যামোফোবিয়া হয় তারা সাধারণত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ উদাসীন থাকে, এসব নিয়ে সিরিয়াস কোনো কথা উঠলে এড়িয়ে যেতে চায়। এছাড়া, বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনা তারা অপছন্দ করে। এমনকি বিয়ের আয়োজনেও তারা যেতে চায় না। বিয়ের ফর্মালিটিজকে তারা বেশ অপছন্দ করে। তারা সবসময়ই মনে করে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়াটা হয়ত ভুল সিদ্ধান্ত হবে। এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকাও গ্যামোফোবিয়ার একটি লক্ষণ।
প্রতিকার- গ্যামোফোবিয়া হয়েছে কিনা এটি অনেকক্ষেত্রে বুঝার আগেই সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কমিটমেন্টে কারো অনীহা থাকলে তাকে যেভাবে তিরস্কার করা হয়, বিপরীতে সে আবার যে প্রতিক্রিয়া দেখায় এর ফলেই সম্পর্ক তিতকুটে হয়ে যায়। ফলে যে মানুষটা গ্যামোফোবিয়ায় ভুগছে সে আরো বেশি সম্পর্কের প্রতি বিরক্তিবোধ করে। আর যে গ্যামোফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেছে মাত্র সেও হয়ত গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে শুরু করবে একটা সময়।
কাজেই, কেউ বিয়েতে আগ্রহী না, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে থাকতে চাইছে না মানেই তার প্রতি শুরুতেই সন্দেহ করে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলা যাবে না। সাইকোলজিস্টদের কাউন্সেলিং এ গিয়ে অনেকসময় এই ফোবিয়া কাটিয়ে উঠা যায়। ডক্টরের পরামর্শে ঔষধ খেলেও গ্যামোফোবিয়া থেকে বের হওয়া সম্ভব। কেউ যদি নিজেই বুঝতে পারেন, আপনি গ্যামোফোবিয়ায় ভুগছেন, তাহলে কারণ বের করুন প্রথমে। কোন ঘটনার পর থেকে আপনার মনোজগতে পরিবর্তন এসেছিল খুঁজে বের করুন। আপনি ভয়টার মুখোমুখি যখন হবেন আবার সাহস করে তখনই আসলে নব্বুই ভাগ ভয় কেটে যাবে।
একবার আপনার আশেপাশের মানুষের কথা ভাবুন তো, এমন কেউ কি আছে যিনি বিয়েতে ভয় পায়? কমিটমেন্টে যেতে চায় না? আজই তার সাথে একবার কথা বলুন। মানুষগুলোর অবচেতন মনে যে সমস্যাটি লুকিয়ে আছে সেটি একবার ধরিয়ে দিলেই হয়ত তারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হবে। গ্যামোফোবিয়া ভয়ংকর কিছু নয় কিন্তু খুব বেশি গভীরে সমস্যাগুলো চলে গেলে এই সামান্য ফোবিয়াই মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসতে পারে!