চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনন্য শাখা হোমিওপ্যাথি

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

মো. শামসুদ্দোজা আরিফ বিএসসি, ডিএইচএমএস সাবেক অধ্যক্ষ ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, ফার্মগেইট, ঢাকা।
(পূর্ব প্রকাশের পর) ৩। রোগ প্রতিরোধ বা আরোগ্যে সূক্ষ্ণমাত্রা অধিকতর কার্যকর। ক) বিসিজি : ইধপরষষর, ঈধষসবঃরবব এবং এঁবৎরহ যৌথ গবেষণায় তাঁদের নাম অনুসারে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দেড়শ' বছর পূর্বের হ্যানিম্যানের সূক্ষ্ণমাত্রার যুগান্তকারী মতবাদের ভিত্তিতে এই ভ্যাক্সিন (াধপপরহব) আবিস্কৃত হয়। ঞযবৎধঢ়ু : টিউবারকুলিন (যক্ষা জীবাণূ) দ্বারা যক্ষা রোগের চিকিৎসায় মূলতঃ কড়পয প্রথম চেষ্টায় ব্রতী হন। তিনি যক্ষা জীবাণু স্থুলমাত্রায় প্রয়োগের মাধ্যমে গবেষণা চালান। এর ফলশ্রম্নতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ফলে এই প্রচেষ্টা পরিত্যক্ত হয়। যাহোক দীর্ঘকাল স্থায়ী কোন বিশেষ অংশের সীমাবদ্ধ ক্ষত চিকিৎসায় সূক্ষ্ণমাত্রা প্রয়োগে অত্যন্ত সন্তোষজনক আরোগ্য সাধিত হয়। সুতরাং সহকর্মীদের অনেকেই যক্ষারোগ চিকিৎসায় সূক্ষ্ণমাত্রায় টিউবারকুলিন ব্যবহার অধিক কার্যকর বলে পরামর্শ দেন। প্রারম্ভিক মাত্রা অতি সূক্ষ্ণ হওয়া উচিত (০.১ সষ. ড়ভ ধ ১/১০০০০০ ফরষঁঃরড়হ) (অ ঞবীঃ ইড়ড়শ ড়ভ ইধবঃবৎরড়ষড়মু, চধমব- ৩২৯) সিরাম- এর উরষঁঃরড়হ-এ প্রথম টিউবে ০.৯ এমএল এবং পরবর্তীতে সকল টিউবে ০.৫ এমএল স্যালাইন ঢালতে হবে। এবার প্রথম টিউবে ০.১ এমএল সিরাম যোগ করে ঝাঁকাতে হবে। ঝাঁকানির পর প্রথম টিউবের এই মিশ্রণের ০.৫ এমএল ২নং টিউবে যোগ করে পূর্বাপর ঝাঁকিয়ে ২নং টিউবের এই মিশ্রণের ০.৫ এমএল ৩নং টিউবে যোগ করে ঝাঁকাতে হবে। এভাবে ১০ নং টিউব পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হবে। (অ ঞবীঃ ইড়ড়শ ড়ভ ইধপঃবৎরড়ষড়মু, চধমব-৪৮৭, ৪৭৭). গ) উড়নবষষ এবং খধরফষধি প্রমাণ করেছেন যে, ১/৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার ভাগের ১ ভাগ) ইমেটিন (চৎরহপরঢ়ধষ অষশধষড়রফ ড়ভ ওঢ়বপধপ) ডাইলিউশন ঊহঃধবসড়বনব ধ্বংস করে, যদি এই ঔষধকে ক্রিয়া করার জন্য যথেষ্ট সময় দেখা হয় (অঢ়ঢ়ষরবফ চযধৎসধবপড়ষড়মু, চধমব- ৬৪৭). ঘ) ঠবহড়স ১/১০০,০০০ (এক লক্ষ ভাগের ১ ভাগ) ডাইলিউশনে প্রবল রক্তস্রাবী রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে অত্যন্ত কার্যকর (অঢ়ঢ়ষরবফ চযধৎসধবপড়ষড়মু, চধমব- ১২৬). উপরোক্ত তথ্য হতে এটা স্পষ্টতঃ যে, এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সৃক্ষ্ণমাত্রার ঔষধসমূহ হ্যানিম্যানের যুগান্তকারী সূক্ষ্ণমাত্রার মতবাদ অনুসরণে প্রস্তুতকৃত। এবার আসা যাক ২য় প্রশ্নে : হোমিওপ্যাথি কি বিজ্ঞান? যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয় এ্যালোপ্যাথি কি বিজ্ঞান? না কোনটাই স্বতন্ত্র বিজ্ঞান নয়। হোমিওপ্যাথি ও এ্যালোপ্যাথি উভয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা ফার্মাকোলজির অন্তর্ভূক্ত। আমরা ঘধঃঁৎধষ ঝপরবহপব-এর অন্যান্য শাখার ব্যাপারে আলোচনায় না গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের (গড়ফবৎহ গবফরপধষ ঝপরবহপব) শাখাগুলোকে নিম্নলিখিত ছকে দেখাতে পারি : \হএটা স্পষ্টত : যে, ঔষধ বিজ্ঞান (চযধৎসধবপড়ষড়মু) ব্যতীত চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় এ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথিতে কোন পার্থক্য বা ভিন্নতা নেই। ঔষধের উৎসজাতও প্রায় অভিন্ন। এ্যালোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক-এর মূল পার্থক্য নিম্নে দেখানো হলোঃ এ্যালোপ্যাথিক : (১) সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ ইতর প্রাণীর উপর গবেষণা করা হয়। এ কারণে ঔষধের ক্রিয়া স্থান ও ধরন সম্পর্কিত (অহরসধষ উধঃধ এবং যঁসধহ বভভবপঃ)-এর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা দেয়। (২) ভেষজ গবেষণা : যে রোগ নিয়ে গবেষণা করা হবে সে রোগ জীবাণু ইতর প্রাণীর দেহে (দৈহিক গঠন সম্পর্কিত রেকর্ড করার পর) প্রবিষ্ট করা হয় এবং গবেষণকারীর দর্শন মোতবেক বিভিন্ন পদার্থর দ্বারা ঐ রোগ বা জীবানুকে অবদমিত করার পরীক্ষ চালানো হয়। অবশেষে যে পদার্থে ঐ জীবাণু বা রোগ অবদমিত হয়, উহার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমুহ দুর করলেও মানুষের উপর ধীর্ঘস্থায়ীক্রিয়া পুঙ্খানপুংখরূপে পরীক্ষা/পর্যবেক্ষণ না করেই বাজার জাতের মাধ্যমে মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়। ফলে প্রায়ই কোন কোন ঔষধের ক্ষতিকারক দিক কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হয়ে বাতিল হচ্ছে। এবং মানবজাতি এর কুফল ভোগ করছে। যেমন : চতুষ্পদ জন্ু্তুর উপর (অহরসধষ উধঃধ) এবং মানুষের উপর ক্রিয়ার (ঐঁসধহ বভভবপঃ) মধ্যে ব্যাপক পার্থক্যের কারণে মানুষের উপর নিম্মোক্ত দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি দেখা যায় : ক) যক্ষ্ণা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, সিফিলিস, ডায়াবেটিস এ্যাপেনডিসাইটিস, শিশুদের সংক্রামক রোগ, পুষ্টিহীনতায় মৃতু্যর সংখ্যা কমানো গেলেও প্রকৃতপক্ষে ক্যান্সারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে (অ :ৎঁঃয ধনড়ঁঃ পধহপবৎ, ঢ়ধমব-২৮) খ) যদিও ঈযষড়ৎধসঢ়যবহরপড়ষ-এর ইৎড়ধফ ঝঢ়বপঃৎঁস অহঃরনরড়ঃরপ ঋসঅ এৎধস চড়ংরঃরাব পড়পপর. এৎধস ঘবমধঃরাব ইধপপরষর-এর বিরুদ্ধে বিশাল পরিধিতে সক্রিয় কিন্তু সাধারণভাবে ঈযষড়ৎধসঢ়যবহরপড়ষ-এর নিম্নধাপ সম্পন্ন বিষক্রিয়া শরীরে দেখা দেয়। এমনকি মারাত্মক ইষড়ড়ফ উুংপৎধংরধ যেমন অঢ়ষধংঃরপ ধহধবসরধ হতে পারে (অ ঞবীঃ ইড়ড়শ ড়ভ ইধপঃবৎরড়ষড়মু, চধমব-৮১) গ) সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি প্রস্তুতকারীগণ শিরপীড়া লাঘবের জন্য দীর্ঘকাল ধরে স্থুলমাত্রায় চযবহধপবঃরহ গ্রহণের ফলে মূত্রাশয়ের রোগের প্রচুর আশংকা দেখা দেয়। (গবফরপধষ চযধৎসধবপড়ষড়মু, ঢ়ধমব-৮১) ঘ) চবহরপরষষরহ-এর মারাত্মক কুফল পরিলক্ষিত হয় যখন অত্যন্ত সংবেদনশীল কোন রোগীর উপর এই অহঃরনরড়ঃরপ প্রয়োগ করা হয় (চৎবংপৎরনবৎং এঁরফব, ঢ়ধমব-৪২) (৩) স্থুলমাত্রা ব্যবহৃত হয় : ক) যক্ষ্ণা রোগে স্থলমাত্রায় যক্ষ্ণাজীবাণু প্রয়োগে কড়পয যে প্রত্যাশায় গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন তাতে তিনি নিরাস হন খ) সালফোনামাইডস ইনটেনসিভ ডোজে বিষ লক্ষণ প্রকাশ পায় গ) স্থুলমাত্রায় ভিটামিন বিপরিতমুখী ক্রিয়া প্রকাশ করে ঘ) ভেনম রক্তকে তরলীকরণসহ রক্তস্রাব প্রবণতা বৃদ্ধি করে (৪) মানসিক লক্ষণাদি : ইতর প্রাণীর উপর গবেষণা করা হয় ফলে তারা মানুষের মনের অভিব্যক্তিসহ বহু লক্ষণাদি প্রকাশে অক্ষম। অথচ এসব লক্ষনাদিতে সাধারণ ভাবে অবস্বাদজাতীয় ঘুমের ঔষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হচ্ছে। (৫) আরোগ্য : প্রকৃত আরোগ্যের পরিবর্তে রোগকে নিয়ন্ত্রণ বা অবদমিত করা হয় যেমন বহুমূত্র হলে কৃত্রিম ওহংঁষরহ স্থুলমাত্রায় প্রয়োগের দ্বারা রক্তস্থিত শর্করা এবং এর সাথে রাসায়নিক পরিবর্তন গবঃধনড়ষরংস ঘটিয়ে রক্তস্থিত অতিরিক্ত শর্করায় মান সমতা রক্ষা করে। ফলে আমরণ কৃত্রিম ওহংঁষরহ বা তৎজাতীয় পদার্থ বা ঔষধের প্রয়োজন হয়। হোমিওপ্যাথিক : (১) মানুষের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ মানুষের উপর গবেষণা করা হয়। এ কারণে ভেষজ ও ঔষধের ক্রিয়াস্থান ও ধরন সম্পর্কিত (যঁসধহ ফধঃধ) এবং (যঁসধহ বভভবপঃ) এর মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা দেয় না। যার ফলশ্রম্নতিতে যুক্তরাষ্ট্রে এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ গবেষণায় হ্যানিম্যানের (হোমিওপ্যাথিকে মানুষের ওপর ভেষজের গবেষণা) নীতি অনুসৃত হচ্ছে। (২) ভেষজ গবেষণা : প্রথম পর্যায়ে যে সকল ব্যাক্তিবর্গের উপর ভেষজের গবেষণা করা হবে সে সকল সুস্থ্য মানুষের মানসিক অবস্থা, প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, রক্তের চাপ, গঠন, মুখের স্বাদ, পাল্‌স, তাপমাত্রা এবং স্রাব ইত্যাদি রেকর্ড করা হয়। ২য় পর্যায়ে গবেষণাকারীর দর্শন মোতবেক কোন নির্দিষ্ট পদার্থ ক্রমাগত ঐ সুস্থ্য দেহে প্রয়োগ করা হয়। ফলে ঐ সুস্থ্য দেহের গঠনে (অহধঃড়সু) এবং কার্যাবলীতে (চযুংরড়ষড়মু) যে সকল অস্বাভাবিক লক্ষণ (চধঃযড়ষড়মু) তৎসহ অস্বাভাবিক মানসিক লক্ষণ উৎপন্ন করে তা রেকর্ড করা হয়। হোমিওপ্যাথিতে একে কৃত্রিম রোগ লক্ষণ বলে। এবং যে পদার্থ এই কৃত্রিম রোগ লক্ষণ উৎপন্ন করে তাকে কৃত্রিম রোগ সংগঠক বলে। ৩য় পর্যায়ে রোগ সংগঠক ঐ পদার্থকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সূক্ষ্ণ মাত্রায় ২য় পর্যায়ে উৎপন্ন কৃত্রিম রোগ লক্ষণ সদৃশ্য রোগীকে প্রয়োগ করে আরোগ্য সাধন করে। গবেষণার এই তিনটি পর্যায়ই ডায়াগনষ্টিক যন্ত্রপাতি সাহায্যে পরীক্ষিত। পরিশেষে পুনঃপুনঃ পরীক্ষালদ্ধ পর্যবেক্ষণ (ঙনংবৎাধঃরড়হ ড়হ বীঢ়বৎরসবহঃ)-এ নিশ্চিত ফলাফলের ভিত্তিতে ঔষধ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে যার ফলশ্রম্নতিতে কোন দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে না। (৩) সুক্ষ্ণমাত্রা ব্যবহৃত হয় : ক) বরং স্থুলমাত্রার পরিবর্তে সূক্ষ্ণ মাত্রায় অত্যন্ত সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায় খ) মাত্রা হ্রাসে ঐ লক্ষণ দূরীভূত হয়, গ) সূক্ষ্নমাত্রায় ভিটামিন অত্যন্ত কার্যকর, ঘ) ভেনম সুক্ষ্নমাত্রায় (১/৫০০০০) রক্তস্রাব রোগীর রক্তক্ষরণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর (৪) মানসিক লক্ষণাদি : মানুষের উপর গবেষণার ফলে মনের অভিব্যক্তিসহ বিভিন্ন অনুভূতির লক্ষণসমূহ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে ফলে অবস্বাদকারক ঔষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। (৫) আরোগ্য : প্রকৃত আরোগ্যার্থে সুক্ষ্নমাত্রায় ওহংঁষরহ বা লক্ষণ সাদৃশ্যে অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগে রক্ত শর্করা মানসমতা রক্ষাকারী চধহপৎবধং-এর মধ্যস্থিত প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাভাবিক নিঃসরণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।