অতিরিক্ত লবণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁঁকি কম খেলে হতে পারে মৃতু্যও

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
লবণ আমাদের শরীর এবং মনে শক্তি যোগায়। 'লবণে থাকা সোডিয়াম আমাদের লালায় দ্রবীভূত হয় এবং স্বাদ কোষে প্রবেশ করে তাদের সক্রিয় করে,' বলেন অধ্যাপক ব্রেসলিন। 'এগুলো এক ধরনের ছোট বৈদু্যতিক স্ফুলিঙ্গের মতো।' লবণ কি কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় নাকি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী? যুক্তরাষ্ট্রের রটগার্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ব্রেসলিন বলছেন, 'লবণ আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য।' তিনি জানান, নিউরন, মস্তিষ্ক, মেরুদন্ড, পেশি, ত্বক এবং হাড়সহ আমাদের সব কার্যকর কোষের জন্য লবণ গুরুত্বপূর্ণ। লবণের কারণে সৃষ্ট এই বৈদু্যতিক সংকেতগুলো আমাদের চিন্তা ও অনুভূতিকে উদ্দীপিত করে। ক্যালসিয়ামের মতো আমাদের শরীর সোডিয়ামও সংরক্ষণ করতে পারে না। ফলে শরীরে সোডিয়াম কমে গেলে একমাত্র সমাধান হলো সোডিয়াম তথা লবণ খাওয়া। যথেষ্ট সোডিয়াম গ্রহণ না করলে তা মৃতু্যর কারণও হতে পারে বলে সতর্ক করেন অধ্যাপক ব্রেসলিন। শরীরে সোডিয়াম কম থাকলে হাইপোনাট্রেমিয়া দেখা দিতে পরে। যার ফলে বিভ্রান্তি, বমি, খিঁচুনি এবং খিটখিটে মেজাজ হয়ে যেতে পারে, এমনকি ব্যক্তি কোমায়ও চলে যেতে পারে। প্রায় সবাই এই কথায় সম্মতি দেবেন যে, লবণ খাবারের স্বাদ বাড়ায়। কিন্তু আপনি কি জানেন কিছুক্ষেত্রে লবণ তিক্তটা লুকানোর কাজটিও করে। যেমন টক কিংবা তিতা কিছু খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই লবণ ব্যবহার করেন। যেমন- আমলকী। তখন কিন্তু লবণ আমলকীর স্বাদ বাড়ায় না, বরং এতে তিতকুটে যে বিষয়টা থাকে তা কমিয়ে দেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিটি ব্যক্তির নিয়মিত পাঁচ গ্রাম লবণ গ্রহণ করা উচিত যাতে করে শরীর দুই গ্রাম সোডিয়াম পেতে পারে। বিশ্বব্যাপী ব্যক্তি প্রতি লবণ গ্রহণের গড় প্রায় ১১ গ্রাম। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস, স্থূলতা এবং কিডনি রোগের ঝুঁঁকি বাড়ায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, লবণ বেশি গ্রহণের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক দশমিক ৯ মিলিয়ন বা ১৯ লাখ মানুষের মৃতু্য হয়। তবে শরীরের ওপর লবণের প্রভাব নির্ভর করে ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে ভুগছে। লবণ কম খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লেয়ার কলিন্স বলেন, কেউ যখন খুব বেশি লবণ গ্রহণ করে, তখন তা প্রতিরোধের জন্য তার শরীর প্রথমে এটি গলিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। আর তা করতে শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে পানি ধরে রাখে। অতিরিক্ত এই তরলকে ধরে রাখার চেষ্টা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা বেশ ক্ষতিকারক হতে পারে। অধ্যাপক কলিন্স বলছেন, যদি কারো রক্তনালী দুর্বল হয়, অতিরিক্ত চাপের কারণে সেগুলো ফেটে যেতে পারে এবং ব্যক্তি স্ট্রোক করতে পারে। কারো জন্য কতটুকু লবণ প্রয়োজন তা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে তার ওপর। খাবারে কতখানি লবণ আছে তা বুঝতে খাবারের ডায়েরি ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে যা খাবারে লবণের পরিমাণ সম্পর্কে জানাতে পারে। কোনো পদ্ধতিই পুরোপুরি সঠিক হয় না, তবে এগুলো ব্যক্তির জন্য সহায়ক হতে পারে।