পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রম

ওভারিতে সিস্টের সংখ্যা কত, শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা কতটা বেশি, তার ওপরেও এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। অনেক দিক মাথায় রেখে তারপরই পিসিওস রোগীর চিকিৎসা শুরু করা হয়।

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অধ্যাপক ব্রিগে. জেনারেল (ডা.) আঞ্জুমান আরা বেগম (অব.) স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-০৬, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রম কি? পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রম আসলে একটি হরমোনজনিত ব্যাধি, যা সাধারণত প্রজনন বয়সের মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। পলি কথার অর্থ অনেক। সুতরাং পলিসিস্টিক মানে হলো অনেকগুলো সিস্ট, যার কারণে শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোনগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। অন্যদিকে পুরুষ হরমোনের আধিক্য দেখা দেয় শরীরে। কীভাবে হয়? পিসিওএস-এর সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে নিম্নলিখিত কারণগুলো পিসিওএস সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে। ১. পুরুষ যৌন হরমোনের উচ্চমাত্রা (এন্ড্রোজেন) ২. জেনেটিক্স ৩. ইনসুলিন প্রতিরোধ এন্ডোজেনের প্রভাব : সাধারণত সুস্থ মহিলাদের ডিম্বাশয় প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বানু ছেড়ে থাকে। এটি গর্ভদশা চলাকালীন পরিণত হয় নতুবা নির্মূল হয়ে একটি সাধারণ মাসিকচক্রের রূপ নেয়। কিন্তু যখন মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তখন অ্যান্ড্রোজেন হরমোন আধ্যিকের কারণে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বড় হয়ে ডিম বের হওয়ার কথা, তাতে বাধা সৃষ্টি হয় এবং এভাবে এক সময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পিসিওএসে আক্রান্ত মহিলাদের ডিম্বানুগুলো সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না অথবা নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন চক্রের সময় ডিম্বানু ছাড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগস্ত হয়। ঝুকিতে কারা মূলত ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অত্যধিক ফাস্ট ফুড খাওয়া, সেডেন্টারি জীবনযাত্রাই-এর প্রধান কারণ। এছাড়া হরমোনাল কিছু অসামঞ্জস্যতা তো আছেই। কী কী উপসর্গ/লক্ষণ নিয়ে আসবেন : ১. অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া। ২. পিরিয়ডকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া। \হ৩. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত চুল গজানো। যেমন- মুখমন্ডল, স্তন, হাত কিংবা পায়ের পাতায়। ৪. ওজন বাড়তে থাকা। ৫. ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে হওয়া বা ব্রণ হওয়া। ৬. শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক কালো হয়ে যেতে থাকা যেমন- হাত কিংবা স্তনের নিচের ত্বকে, গলার পেছনের অংশে, কুঁচকিতে কালো দাগ ইত্যাদি। ৭. ঘুমে সমস্যা হওয়া কিংবা সারাক্ষণ দুর্বলতা ও বিষণ্ন্নতা অনুভব করা। ৮. মাথাব্যথা। ৯. গর্ভধারণে অক্ষমতা। ১০. চুল পড়া। রোগ নির্ণয় : বর্তমানে পিসিওএস নির্ণয়ে একক কোনো পরীক্ষা নেই। অনেকগুলো বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তার মধ্যে রয়েছে ক্লিনিক্যাল তথ্য, রোগীর অন্য কোনো রোগ বা পারিবারিক ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাব পরীক্ষা। কিছু পরীক্ষা পিসিওএস আসলেই আছে নাকি অন্য কোনো উৎস থেকে রোগীর সমস্যা হচ্ছে তা জানার জন্য করা হয় উদাহরণসরূপ ডিম্বাশয় বা এড্রিনাল গস্নান্ডে কোনো টিউমার থাকলে তার কারণে অত্যধিক এনড্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হতে পারে। আবার এড্রিনাল গস্নান্ড যদি অস্বাভাবিক বড় হয় তখনো অতিমাত্রায় এনড্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হতে পারে, যা আসলে পিসিওএস নয়। সাধারণত রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, নিম্নলিখিত তিনটির মধ্যে অন্তত দু'টি পাওয়া গেলে : ডিম্বপাত না হওয়া, উচ্চমাত্রার অ্যান্ড্রোজেন এবং ওভারিয়ান সিস্ট। আল্ট্রাসাউন্ড করে সিস্ট আছে কিনা নির্ণয় করা যায়। একইরকম উপসর্গ দেখা যায় যেগুলোতে সেগুলো হলো অ্যাড্রেনাল হাইপারপেস্নসিয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম, এবং রক্তে উচ্চমাত্রায় প্রোল্যাক্টিনের উপস্থিতি। চিকিৎসা : পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের চিকিৎসা করার আগে অনেকগুলো বিষয়ও মাথায় রাখতে হয়। যে মহিলা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে আক্রান্ত, তিনি ভবিষ্যতে গর্ভবতী হতে চান কিনা, চাইলেও কতদিনের মধ্যে চান, তার বয়স কত?ু এ রকম আরও অনেক বিষয়ই মাথায় রাখতে হয়। আবার ওভারিতে সিস্টের সংখ্যা কত, শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা কতটা বেশি, তার ওপরেও এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। তাছাড়া যিনি এই সমস্যার সমাধান করতে চিকিৎসা করাতে চাইছেন, তার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কিনা, বিশেষ করে তিনি ডায়াবেটিক কিনা বা তার হার্টের অবস্থা কী রকম? ুএ রকম অনেক দিক মাথায় রেখে তারপরই পিসিওস রোগীর চিকিৎসা শুরু করা হয়।