ঈদে বাঁধ মেরামত করেই সময় পার খুলনাবাসীর

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

আতিয়ার রহমান, খুলনা
ঈদের প্রভাব পড়েনি দুর্যোগকবলিত খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার মানুষের মধ্যে। দুই উপজেলার অন্তত চার ইউনিয়নের মানুষ ঈদের নামাজ পড়েছে কাদা পানি অথবা উঁচু বেড়িবাঁধের ওপর। খেয়ে না খেয়ে কষ্টের মধ্যেই দিন পার করছে ভাঙনকবলিত অধিকাংশ মানুষ। সকাল হলেই ছুটছে বাঁধ মেরামত কাজে। আর রাত কাটাতে হচ্ছে রাস্তার উপর মাচা বেঁধে। দুটি ইউনিয়নের ৯০ ভাগ ডুবে যাওয়ায় নিত্যপণ্য কেনাকাটাতেও সংকট দেখা দিয়েছে। উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া এলাকার কামরুল ইসলাম বলেন, 'রাতে থাকার মতো কোনো শুকনো জায়গা নেই। সারাদিন বাঁধে কাজ করতে হয় আর রাতে ঘরে থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। দূরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে সকলের রান্না। সেখানে গিয়ে খেয়ে রাস্তার ওপর মাচা করে সেখানেই ঘুমিয়ে থাকি। ঈদ এবার আমাদের জন্য না। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ছাত্রনেতা আবু সাইদ বলেন, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এ এলাকার মানুষ। চারিদিকেই শুধু থৈ থৈ পানি। ঘরে খাবার নেই। মাথা গোজার ঠাঁই নেই। খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-২ সূত্রে জানা যায়, কয়রায় পাউবোর ১৩ ও ১৪-১ নং পোল্ডারের অন্তত ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম্পানের আঘাতে কয়রার পাঁচটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। বন্যায় কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের ছোটবড় ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ না খেয়ে দিন পার করছে। কেউ কোন সহযোগিতা করেনি। পুরুষরা সকাল হলেই যাচ্ছে বাঁধ বাঁধতে। মহিলারা ধারদেনা করে চাল ফুটিয়ে রাখছে। তাই লবণ পানি দিয়ে খাচ্ছে মানুষ। ইউনিয়নে ৫২০০ পরিবার রয়েছে। কিন্তু সরকারি সাহায্য এসেছে মাত্র ২৫০ পরিবারের জন্য। এদিকে আমাদের ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার ডুমুরিয়ায় আম্পান ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত পাউবোর বেড়িবাঁধটি অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকশত লোকের স্বেচ্ছাশ্রমের মধ্যদিয়ে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি মেরামত করা হয়। বাঁধটি পরিদর্শন করেন খুলনা-৫ আসনের সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমীনা পারভীন। ঘূর্ণিঝড় আম্পান গত ২০ মে রাতে ডুমুরিয়ায় দানবীয় শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে। প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসে পাউবোর ১৭/১ পোল্ডার আওতাধীন কোরাকাটা ও হেতালবুনিয়া অংশে বেড়িবাঁধ উপচে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। এতে বাঁধের প্রায় ৫০০ গজ পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই পোল্ডারের আওতায় মাগুরখালী, শোভনা ও আটলিয়া ইউনিয়ন। এলাকাটি উপকূল ও অতি নিম্নাঞ্চল হওয়ার কারণে বাঁধের কয়েকটিস্থানে বারবার ক্ষতি হচ্ছে। অচিরেই বাঁধ স্থায়ীভাবে সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজ। এ প্রসঙ্গে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জি বলেন, ওই অঞ্চলের বেড়িবাঁধ একেবারই বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় একটি মেগা প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। সেটি অনুমোদন হলে ডুমুরিয়ার সকল বেড়িবাঁধের স্থায়ী সমাধান হবে। নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, সরেজমিনে দেখেছেন বেশ কিছু বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমবেত হয়ে জনগণকে নিয়ে বাঁধটি মেরামত করছেন। বিষয়টি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। যাতে পরবর্তিতে আরও মজবুতভাবে বাঁধটি নির্মাণ হয়।