কামারপলস্নীর টুংটাং শব্দে করোনার হানা

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি কামারশালায় কাজ করছেন কামাররা -যাযাদি
ঈদুল আজহার মাত্র একমাস বাকি। অন্য বছরগুলোর এ সময় ক্রেতার আগমন ও কাজের চাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পেতেন না কামারেরা। আগুনের ফুলকিতে গরম লোহায় দিন-রাত হাতুড়ির পিটুনির টুংটাং শব্দে মুখরিত থাকত কামারশালা। কিন্তু করোনাভাইরাস এ বছর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমীর কামারপলস্নীতে। জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে কিছুদিন সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছিল বাজারের ১৫-২০টি কামার পরিবার। একই সঙ্গে একমাত্র আয়ের পথটিও থেমে গিয়েছিল। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আবারো বাজার চালু হওয়ায় স্বল্প পরিসরে চলছে তাদের কাজ। শক্ত হাতে কারুকাজের মাধ্যমে লোহা দিয়ে দা, বঁটি, চাকু, কাস্তে, খুন্তিসহ গৃহস্থালী ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত নানা হাতিয়ার তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ কামারেরা। বুধবার সকালে বরমী বাজার কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, অল্প কিছু ক্রেতার দেওয়া কাজগুলো গল্পের ফাঁকে ফাঁকে করে রাখছেন কামারেরা। বেশ কিছুদিন হাট বন্ধ থাকায় কামাররা অলস সময় পার করছেন। ছিল না হাতুড়ির শব্দ, কয়লার চুলায় গরম তাপ আর নগদ উপার্জন। ৬০ বছর ধরে এ বাজারে কাজ করছেন ৭০ পেরোনো মাখন কর্মকার। তিনি জানান, ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে কাজে হাত দিয়েছিলেন, এখনও চলছে। কিছুদিন লকডাউন ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকায় কাজকর্ম ছিল না বললেই চলে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে হাটের দিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হতো, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা ঠেকেছে মাত্র ৫০০-১০০০ টাকায়। লকডাউনে কোনো ত্রাণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পঞ্চাশোর্ধ রাধেশ্যাম কর্মকার জানান, করোনার শুরুর দিকে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে কিছু সহায়তাসামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। কাজ কামের যে অবস্থা, তাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে এখানকার কামার পরিবারগুলোর। বরমী ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার যায়যায়দিনকে বলেন, লকডাউনের সময় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারসামগ্রী কামারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারিভাবে কোনো কিছু বরাদ্দ হলে ক্ষুদ্র ও গরিব ব্যবসায়ীদের অবশ্যই এর আওতায় আনা হবে।