বন্যায় পানিবন্দি হাজারো মানুষ

বসতঘর, ফসলের জমি নিমজ্জিত

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
সাভারে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ফসলি জমি -যাযাদি
বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিমজ্জিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। বসতঘর, ফসলের খেত, গাছপালা, সড়ক পানিতে ডুবে নিম্নাঞ্চলের মানুষের নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া গেজ স্টেশনে ১৪ সেন্টিমিটার পানি কমে ৮.৮৫ পয়েন্ট অর্থাৎ বিপৎসীমার ২০ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ পানি প্রবাহের এ তথ্য জানান। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কিছু ফসলি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন পদ্মা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাবার সংকট। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস জানান, কয়েকদিনের মধ্যে পানি এসব ফসলি খেত থেকে সরে না গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাভার : সাভারের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে আবাদি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমিতে পানি জমে আবাদি শাকসবজি পচে গলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিতে পড়ছে প্রান্তিক কৃষক। তাদের সংসার ও চলমান জীবনে চলছে হাহাকার। প্রান্তিক কৃষক মানিক, রফিক, বাচ্চু, নজু মিয়া জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় আবাদি শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি আর বানের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষি জমি। এতে তাদের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যদি পরবর্তিতে উজান থেকে পানি এসে পস্নাবিত হয় সেক্ষেত্রে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কৃষানিদের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কৃষানিদের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যথাযথ সহযোগীতা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ জানান, বৃষ্টিজনিত কারণে ফসলে মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে যা পরবর্তীতে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) : টঙ্গিবাড়ীতে পদ্মার পানির প্রবল স্রোতে রাস্তা ভেঙে গেছে। যার কারণে নিম্নাঞ্চল দ্রম্নত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ওই রাস্তায় চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। স্রোতের কারণে উপজেলার হাসাইল কামারখাড়া সংযোগ সড়কটির ভাঙ্গনীয়া কবরস্থানের সামনের একটি অংশ ভেঙে গেছে। এতে ওই অঞ্চলের প্রায় ১৪টি গ্রামের মানুষ এবং আশপাশের মানুষের যাতায়াত ওই রাস্তায় বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার জানান, আপাতত বালুর বস্তা ফেলানো হচ্ছে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে আমরা রাস্তাটি সংস্কার করে দেব। বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে জেলে সমাজসহ প্রায় ৬-৭ হাজার গ্রামবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে শত বছর ধরে। নদী এপাড় গড়ে, ওপাড় ভাঙে এই তো নদীর খেলা। ঘোড়াউত্রা করালস্রোতে কয়েকশ' বাড়ি কয়েক বছর ধরে ভেঙে যাচ্ছে। তারা এখন বর্ষাকালে ও শুকনো মওসুমে ও নদী ভাঙনে কবলিত হয়ে থাকে। নদী ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলো হলো দিঘীরপাড়, মাইছচর ও হুমাইপুর ইউনিয়ন। এ বিষয়ে বাজিতপুর ইউএনও দীপ্তিময়ী জামান জানান, এ ৩টি ইউনিয়নকে সরকারিভাবে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হচ্ছে। কক্সবাজার : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাইরার ডেইল জালিয়াপাড়া এলাকা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। এতে করে দ্বীপের লক্ষাধিক মানুষ এখন জোয়ার পানির আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়লে এলাকার মানুষ দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। এ সময় জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে যায় অনেক ঘরবাড়ি ও গাছপালা। পানিতে ভেসে গেছে কিছু বাড়ি ও বাড়ির মালামাল। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাসেম ও হারুন আহমেদসহ অনেকে বলেন, হঠাৎ করে জোয়ারের পানি চলে আসায় এলাকার অবস্থা এখন খুবই নাজুক। সাইরার ডেইলের দক্ষিণ পশ্চিমে কয়লা বিদু্যৎ প্রকল্পের পাথরের বেড়িবাঁধের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাইরার ডেইল জালিয়া পাড়া এলাকায় প্রতিনিয়ত খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ার পানি থেকে রক্ষা করতে জিও টিউব দিয়ে হলেও খোলা বেড়িবাঁধটি নির্মাণ মাতারবাড়িবাসীর এখন একটাই দাবি। কক্সবাজার পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সালমান বলেন, মাতারবাড়ি সাইরার ডেইল কিছু পরিবারে পানি প্রবেশ করার বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।