হাওড়ের ২০ হাজার জেলে পরিবারে দুর্দিন

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

মন্তোষ চক্রবর্তী, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ)
হাওড় অঞ্চলের ২০ হাজারেরও বেশি জেলে পরিবারে জীবনে আসছে চরম দুর্দিন। বংশানুক্রমিক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসা এসব জেলে পরিবার যেন বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। একদিকে মৎস্যসম্পদ হ্রাস অন্যদিকে ইজারাদার ও প্রভাবশালীদের শোষণ-অত্যাচার ইত্যাদিতে অতিষ্ঠ হয়ে ইতোমধ্যেই অনেক জেলে পরিবার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। আবার কেউ বাপ-দাদার ভিটামাটি বিক্রি করে শহরের বস্তি অথবা অজানা উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছে। পেশাগতভাবে এ অঞ্চলে ছোট-মাঝারি কৃষক আর ক্ষেতমজুর, দিনমজুর মানুষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এসব খেটে খাওয়া লোকজন সারা বর্ষা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে স্রোতবহ নদী এবং জলমহালগুলোর প্রতিটি ইজারাদার এবং প্রভাবশালী লোকজনের করায়ত্তে। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সমিতিতে ইজারা নেওয়ার পুঁজি না থাকায় অমৎস্যজীবীদের সদস্য করে সমিতি রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। নদীগুলো ইজারা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলেদের মাছ ধরতে না দিয়ে এবং বাঁশ-কাঁটা দিয়ে নদীর নাব্য হ্রাস করা, পাটিবাঁধ ও বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জালে মাছ ধরা ইত্যাদি সরকারি নিষেধ অমান্য করে কোটি কোটি টাকা লাভবান হচ্ছে। জেলেরা জানায়, ইজারাদারদের ইচ্ছামাফিক রসিদবিহীন নদীতে নির্ধারিত সীমানায় মাছ ধরতে হচ্ছে। বর্ষায় ভাসান পানিতে নদীর সীমানা বহির্ভূত হাওড়-খাল, এমনকি আবাদি জমিতেও ইজারাদাররা জেলেদের মাছ ধরতে দিচ্ছে না। ফলে জেলেদের জীবন চরম বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ইজাদারদের লাঠিয়াল বাহিনীর মারধর, জাল নৌকা ধরে নেওয়া, এমনকি সুযোগে জেলেদের নামে মামলা ঠুকে দেওয়া এ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত ঘটছে। মাছ ধরতে গিয়ে লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে খুন হওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট একাধিক ঘটনার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলেরা প্রতিনিয়ত বাস্তুত্যাগী, পেশাত্যাগী হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ পাচ্ছেনা বলে অসংখ্য জেলের ভাষ্য। এ ব্যাপারে হাওড় অঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল ইসলাম বাবু বলেন, বেআইনিভাবে উন্মক্ত নদীগুলো লিজ দেওয়ায় নদীর নাব্য হারানো এবং অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে মাছের অভয়ারণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। তাতেই হাওড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি।