কলাপাড়ায় বিপাকে লাঙল তৈরির কারিগররা

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

চঞ্চল সাহা, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কাঠের লাঙল তৈরি করছেন কারিগররা -ফাইল ছবি
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লাঙল তৈরির কারিগরদের মাঝে আগের সেই ব্যস্ততা নেই। বর্তমানে যান্ত্রিক (পাওয়ার টিলার) চাষাবাদে কৃষক ঝুঁকে পড়ায় লাঙল দিয়ে আবাদের প্রচলন অনেকটা উঠে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার লাঙল কারিগরদের পরিবার। জানা যায়, আষাঢ়-শ্রাবণ মাস শুরু হলে শুরু হতো লাঙল তৈরির কাজ। বিশেষ করে পৌরশহরের সাপ্তাহিক হাটের দিন মঙ্গলবার খানকায়ে হামদিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাঠে দেখা যেত সারিবদ্ধভাবে লাঙল তৈরির দৃশ্য। যান্ত্রিক চাষাবাদে খরচ এবং সময় সাশ্রয় হওয়ায় কৃষক ঝুঁকে পড়েছে পাওয়ার টিলার চাষাবাদে। ফলে দিনের পর দিন কাঠের তৈরি লাঙলের চাহিদা কমে যাওয়ায় কারিগরদের অনেকে চলে গেছেন অন্য পেশায়। ফলে নতুন করে এ পেশায় কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না। এক সময় উপজেলায় এক ফসলি জমি চাষাবাদ হওয়ায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে ব্যাপক চাষাবাদে ব্যস্ত থাকেন কৃষক। এ সময় লাঙলও তৈরি হতো ব্যাপকভাবে। এ সময়টা মূলত লাঙল তৈরির কারিগরদের মূল মৌসুম। অধিকাংশ কারিগর বাড়ি থেকে গাছ সাইজ করে এনে হাটে বসেই তৈরি করতেন লাঙলগুলো। সারা দিন বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে মুখে গান গেয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাঙল দিয়ে চাষাবাদ করতেন কৃষক। এ চাষাবাদ ছিল গরু কিংবা মহিষ দিয়েই। ফলে কৃষক আনন্দ পেতেন লাঙল চাষাবাদে। বর্তমানে গ্রামবাংলার এ চিত্র অনেকটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও দেখা যাচ্ছে না হালের এ চিত্র। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের লাঙল তৈরির কারিগর মোহাম্মদ আলী (৬৮) জানান, দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে লাঙল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পৈতৃক পেশা বলেই আঁকড়ে রেখেছেন। বর্তমানে যান্ত্রিক চাষাবাদের কারণে লাঙলের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে উপার্জন কমে যাওয়ায় আগের মতো জীবনধারণে সচ্ছলতা নেই। পাওয়ার টিলারের প্রভাবে বিপাকে পড়েছেন মোহাম্মদ আলীসহ একই ইউনিয়নের ইদ্রিস আল ও চান মিয়াসহ অন্তত ২০ জন কারিগর। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামের কারিগর হাসানুজ্জামান জানান, লাঙলের প্রচলন নেই, সহজ পদ্ধতি এবং কম খরচের কারণে মানুষ যান্ত্রিক চাষাবাদে আগ্রহী বেশি।