শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুঠিয়ার পাঁচআনি জমিদারবাড়ী

বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
রাজশাহীর পুঠিয়ার মহারাণী হেমন্ত কুমারীর পাঁচআনি জমিদারবাড়ী -যাযাদি

রাজা নেই, রাজ্যও নেই; তবে রাজপরগনার সর্বত্রই রয়েছে রাজাদের স্মৃতিবিজড়িত পুরাকীর্তি। বলছিলাম রাজশাহীর পুঠিয়ার রাজবাড়ীর কথা। এখানে রয়েছে ১৪টি পুরাকীর্তি। এর মধ্যে একটি রাজবাড়ী ও ১৩টি মন্দির রয়েছে। মহারানি হেমন্ত কুমারীর এই বাসভবন পাঁচআনি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত।

রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং নাটোর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পুঠিয়া অবস্থিত। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম। বর্তমানে এই রাজবাড়ীটি লস্করপুর ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সপ্তদশ শতকে মোগল আমলে তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পুঠিয়া জমিদারি ছিল প্রাচীনতম। কথিত জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে 'রাজা' উপাধি লাভ করার পর সেটি পুঠিয়া রাজবাড়ী রূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয়। সেই ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচ আনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিন আনা।

১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ীর জমিদারিও বিলুপ্ত হয়। কিন্তু জমিদারি বিলুপ্ত হলেও সে আমলে নির্মিত প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা ঠিকই এখনো টিকে রয়েছে। অপরূপ এই প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানি হেমন্ত কুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানি শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে নির্মাণ করান।

পুঠিয়া বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে দ্বিতলবিশিষ্ট আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পুঠিয়া রাজবাড়ীটি একটি আকর্ষণীয় ইমারত। জমিদার বা রাজারা এখান থেকে তাদের রাজকর্ম পরিচালনা করতেন। ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলঙ্করণ, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়াল ও দরজার ওপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণশৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বিম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ীর চারপাশে পুকুর খনন করা হয়েছিল।

রানির স্নানের ঘাট, অন্দর মহল মিলিয়ে বিশাল এই রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ। রাজবাড়ীর আশপাশে ছয়টি রাজদিঘি রয়েছে। প্রত্যেকটি দিঘির আয়তন ছয় একর করে। মন্দির রয়েছে ছোট-বড় ১৩টি। সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এ ছাড়া বড় মন্দিরগুলোর মধ্যে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ উলেস্নখযোগ্য। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। পিরামিড আকৃতির দোলমঞ্চটি চমৎকার।

এই রাজবাড়ীটি পর্যটনকেন্দ্রে ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রিতিনিধিরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112385 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1