সুলতানি আমলের ঐতিহ্য মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অমিতাব দাস অপু, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ৫০০ বছরের পুরনো শাহী মসজিদটি সুলতানি আমলের এক ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করছে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই পুরাকীর্তিটি কাগজ-কলমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকলেও চরম অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, গৌড়ের ইলিয়াস শাহী বংশের উত্তরাধিকারী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের ছেলে রুকুনউদ্দীন বারবক শাহের (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রি.) শাসনামলে খান-ই-মোয়াজ্জেম উজিয়াল খান ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ-সংশ্লিষ্ট শিলালিপি থেকে এর ইতিহাস জানা গেলেও বর্তমানে শিলালিপিটি উধাও হয়ে গেছে। ১৮৬০ সালে কমিশনার মি. রেলির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি জাদুঘরে শিলালিপিটি সংরক্ষিত রয়েছে। মসজিদটির নাম অনুসারেই ওই গ্রাম ও ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে মজিদবাড়িয়া। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৯ ফুট এবং প্রস্থ ৩৫ ফুট। পূর্ব দিকে সাড়ে ২১ফুট দৈর্ঘ্য ও আট ফুট প্রস্থ একটি বারান্দা রয়েছে। এর প্রধান কক্ষ বর্গাকারে নির্মিত এবং প্রত্যেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য ২১ ফুট। দেয়ালগুলো প্রায় সাড়ে ছয় ফুট চওড়া। মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে চারটি করে দরজা আছে। পশ্চিম দিকের দেওয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। মাঝখানের মেহরাবটি পাশের দুটির চেয়ে আকারে বড়। বারান্দার ছাদ চৌচালা ঘরের আকারে নির্মিত। মসজিদ-সংলগ্ন একটি বড় দিঘি রয়েছে। মুসলিস্নরা এখানে ওজু ও গোসল করেন। সুলতানি আমলে নির্মিত সুনিপুণ কারুকার্যে খচিত মসজিদটির প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে রড-সিমেন্ট ছাড়াই চুন-সুঁড়কি ও পোড়া মাটির ইট দিয়ে তৈরি এবং ছাদের ওপর বড় গোলাকৃতির একটি গম্বুজ। ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে সুন্দরবন এলাকার জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়। স্থানীয়দের ধারণা, মসজিদটি মাটির নিচ থেকে অলৌকিকভাবে গজিয়ে উঠেছে। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন পরগনার ইয়াকিন শাহ ও কালাশাহ। মসজিদের দক্ষিণ পূর্ব পাশেই রয়েছে তাদেরসহ আরও দুটি কবর। প্রতিবছর ৩০ কার্তিক বাৎসরিক মাহফিল আয়োজন করে এন্তেজামিয়া কমিটি। মাহফিলে দেশবরেণ্য বিভিন্ন আলেম-ওলামা ওয়াজ করেন। স্থানীয় মুরুব্বি মো. মোক্তার আলী ফকির (৮৫) জানান, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকায় মসজিদের নাম থাকলেও উন্নয়নমূলক কোনো কাজ ওই দপ্তর থেকে চোখে পড়ে না। শাহী মসজিদের ইমাম মওলানা মো. ইব্রাহীম জানান, প্রাচীন স্থাপত্যকলার উজ্জ্বল নিদর্শন এই মসজিদ দেখতে বহু দর্শনার্থী মজিদবাড়িয়া গ্রামে আসেন। এই মসজিদে যারাই নামাজ পড়েন, প্রশান্তিতে তাদের মন ভরে ওঠে। মসজিদ কমিটির সভাপতি মোতালেব মৃধা জানান, মসজিদ-সংলগ্ন রেস্ট হাউসটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রেস্ট হাউসসহ মসজিদের উন্নয়নে বর্তমান সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।