তিস্তা, কপোতাক্ষ ও সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বিলীন বিস্তীর্ণ জনপদ

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে চর বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় -যাযাদি
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন নদনদীর সঙ্গে তিস্তা, কপোতাক্ষ এবং সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে চর বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বসতঘর, সড়ক ও ফসলি জমি। এদিকে, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে সন্ধ্যার ভাঙনে ৪ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারে হাহাকার চলছে। বিলীন হওয়ার পথে বিসিক শিল্পনগরীসহ বহু স্থাপনা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওই এলাকার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ২০ পরিবারের বসতবাড়িসহ বাস্তুভিটাও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিদ্যালয়টি তিস্তা নদীর পশ্চিম তীরে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চরবিদ্যানন্দ গ্রামে অবস্থিত। ১৯৯৮সালে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪৭ টাকা ব্যয়ে স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর চরাঞ্চলের ছেলেময়েরা ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে আসছে। বেশ কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়ে পশ্চিম তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। এর ফলে ওই বিদ্যালয়টি হুমকির মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিস বিদ্যালয়টির জন্য সর্বসাধারণের মাঝে ওপেন টেন্ডার আহ্বান করে। কিন্তু টেন্ডারে কেউ এ গিয়ে না আসায় বিদ্যালয়টি ওই অবস্থায় অবস্থান করে। গত শুক্রবার রাতে বিদ্যালয়টির ভবনের নিচ দিয়ে প্রবল বেগে নদীর পানি প্রবাহিত হলে ভবনটির কিছু অংশ ধসে পড়ে। গত শনিবার ভবনের একটি অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হতে থাকে। এতে করে ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোলায়মান আলী বলেন, টেন্ডার দেওয়ার পরও কেউ এগিয়ে না আসায় ভবনটি নদীতে চলে যায়। প্রধান শিক্ষককে আসবাবপত্র ও দরজা-জানালাগুলো সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান খুললে পরবর্তী ব্যবস্থা নিয়ে চর ডিজাইন বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে। পাইকগাছা (খুলনা) : খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে ২নং কপিলমুনি ইউনিয়নের মালথ গ্রামের আরজ মোড়লের বাড়ি থেকে পদ্মাকান্দার সাবেক পিচের রাস্তার ধার হয়ে সিলেমানপুর পালপাড়া অভিমুখী রাস্তা পর্যন্ত। ভাঙনে ইতোমধ্যে অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছ-গাছালি, ফসলের খেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার বাসিন্দারা। ভান রোধে দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। মালথ ও সিলেমানপুরের নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। মালথ ও সিলেমানপুরের মোকাম মোড়ল, গনি, পাগল, জব্বার মোড়ল, সৈয়দ মোল্যা, আব্দুল জব্বাররা জানান, ভাঙনে একেকজনের ৫০ থেকে ১০০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আবার অনেকে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। স্থানীয় দুলাল, গণেশ জানান,  ৩০ থেকে ৪০ পরিবারের বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। বাকি যারা আছেন ভয়াবহ ভাঙনের কারণে প্রতিদিন নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান কওসার আলী জোমাদ্দার  জানান, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের যেন পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং এখন যারা আছে তারা যাতে থাকতে পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম সিদ্দিকী জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬শ মিটার ভাঙন স্থানে ১ হাজার বালুভর্তি বস্তা ফেলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) : পিরোজপুরে নেছারাবাদে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকায় চলছে হাহাকার। নদীতে বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে উপজেলার ৪টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার। বঙ্গোপসাগরের স্রোতধারা ভয়ংকর আকারের ভাঙনের রূপ নিচ্ছে নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি), ছারছিনা দরবার শরীফ, দক্ষিণ-পশ্চিম কৌরিখাড়া বন্দর, জলাবাড়ি বাজার, মুনিনাক, কাউখালী বাজারসহ ৪টি গ্রামের ১৪টি এলাকা। ভাঙনকবলিত এলাকার বসতভিটা, ফসলি জমি ও শতাধিক স্থাপনার বেশির ভাগই সন্ধ্যা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাথরগুড়া ও বালু সিমেন্টের বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তেমন কোনো প্রতিরোধ হয়নি। অব্যাহত এ ভাঙনে বদলে যাচ্ছে নেছারাবাদের মানচিত্র। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। অর্ধশত বছর ধরে শুরু হওয়া অব্যাহত এ ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারায় ২০ বছর আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে জলাবাড়ি বাজার, ছারছিনা ও মিয়ার হাটবন্দর ঘাটসহ বহু স্থাপনা। বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে দক্ষিণাঞ্চলের বিসিক শিল্প নগরী। এলাকাবাসী দ্রম্নত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।