এশিয়ার প্রথম মসজিদ সাহাবায়ে কেরাম

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

তৌহিদুল ইসলাম, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটে ১৪শ' বছরের পুরনো সাহাবায়ে কেরাম জামে মসজিদের ধ্বংসাবশেষ (বাঁয়ে), পাশেই নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে সুদৃশ্য মসজিদ কমপেস্নক্স -যাযাদি
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাটের সাহাবায়ে কেরাম জামে মসজিদ। ১৪শ' বছর আগে নির্মিত এ মসজিদকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। এর অবস্থান রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র ১ কি.মি. দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায়। মসজিদের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া একটি ইটের মধ্যে আরবিতে স্পষ্টভাবে লেখা কালেমা তাইয়ে্যবা ও হিজরি ৬৯ সন। এতে স্থানীয়রা ধারণা করেন যে, আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃতু্যর ৬০ বছর পরে আরবি ৬৯ হিজরী অর্থাৎ ইংরেজি ৬৮৯ থেকে ৬৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ এলাকায় গড়ে তোলা হয়। কালের বিবর্তনে এটি হারিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৭ সালে সদর উপজেলার রামদাস গ্রামে মসজিদের আড়া নামক জঙ্গলাচ্ছন্ন একটি স্থানের মাটির ঢিবি কেটে সমতল করার সময় প্রাচীন এ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন জমির মালিক আব্দুল গফুরসহ স্থানীয়রা। পরে সেখান থেকে ইট ওঠানো বাদ দিয়ে মাটি সরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট একটি মসজিদের ভিত্তি সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়। যার দেওয়ালের পুরুত্ব ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর একটি দরজা এবং ঘরের চারকোণে ৮ কোণবিশিষ্ট ৪টি স্তম্ভ রয়েছে। তাছাড়াও তলিয়ে যাওয়া মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে কারুকার্যময় ইট এবং গম্বুজের চূড়া পাওয়া গেছে। তবে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, ৬শ' থেকে ৭শ' খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রামদাস গ্রামে চকচকার বিল নামে একটি প্রসিদ্ধ নদীবন্দর ছিল। সে সময় আরব বণিকরা বাণিজ্যের জন্য এ নদী পথ দিয়ে ভারত উপমহাদেশে আসতেন। তাই এ বন্দর ঘিরে সেখানে মসজিদটি নির্মিত হতে পারে। ১৯৮৭ সালে মসজিদটি পুনঃরুদ্ধারের পর থেকেই সেখানে নামাজ পড়ে আসছেন স্থানীয়রা। প্রাচীন এ মসজিদটি দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এখানে ভিড় করছেন। বর্তমানে প্রাচীন এ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষের চারপাশ ঘিরে একটি সুদৃশ্য মসজিদ কমপেস্নক্সের নির্মাণ কাজ চলছে। মসজিদের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রাচীন এ মসজিদ ঘিরে মাদ্রাসা ও লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য আরও বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মসজিদটির সংস্কার ও ধ্বংসাবশেষ রক্ষণাবেক্ষণে সরকারসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে মুসলিম বিশ্বের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে এটি।