ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত জুম চাষিরা

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ফজলুর রহমান রাজন, রাঙামাটি
ফসল তুলছেন জুম চাষিরা
‘হিল্লো মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে, যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়, শস্য ফুলুন দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়...।’ যার বাংলা অথর্: সুন্দরী মেয়েটি জুম ক্ষেতে যায়। যেতে যেতে আবার পিছন ফিরে চায়, বিস্তীণর্ পাহাড়ে শষ্যের ফসল দেখে তার বুক জড়িয়ে যায়। এটি চাকমা স¤প্রদায়ের একটি প্রিয় একটি গান। পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা যখন জুম ক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তুলতে যায় তখন মনের আনন্দে জুম ঘরের মাচায় বসে তারা এ গানটি গায়। সারাবছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ে বিভিন্ন ফসল ফলান পাহাড়িরা। এখন তারা এসব উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জুম চাষিরা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে আগুন দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া মাটিতে শুঁচালো দা দিয়ে গতর্ খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, তুলা, তিল, ভ‚ট্টা, ফুটি, মরিচ, ঢেঁড়শ ইত্যাদি বীজ বপন করেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই ফসল পাওয়া শুরু হয়। এবার জুম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে। রাঙামাটির কাপ্তাই সড়কে মোরঘোনা এলাকার বিপুল চাকমা বলেন, গত বছর পাহাড় ধসের ফলে জুম চাষের জায়গা কমে গেছে। তারপরও অল্প জায়গাতে আমার জুম চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। জুম চাষিদের অভিযোগ, স্থানীয় কৃষি কমর্কতার্রা তাদের কোনো খবর রাখেন না। জুম চাষ করে যে পরিমাণ ধান পাওয়া যায় তাতে তাদের কয়েক মাস চলে যায়। কৃষি বিভাগ যদি এমন কোনো জাতের ধান জুম চাষিদের দিত যা চাষ করলে ফলন ২-৩ গুণ বেশি হবে, তাহলে আমরা সারা বছর চলতে পারতাম। এদিকে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, আগের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে, কৃষি বিভাগ জুমিয়াদের সার ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে। এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের গবেষক মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে জুমের ফলন ভালো হবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন।