হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত ভূমি-গৃহহীনদের ঘর

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর -যাযাদি
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ভূমি-গৃহহীনরা পাচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর আওতায় তৈরি করা এসব ঘর হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন। এ প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও বাগেরহাটের মোলস্নাহাট উপজেলার ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হলো- গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৭৮৭ গৃহ। ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন তার সরকারের আমলে 'একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না, গ্রাম হবে শহর'। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর আওতায় সারাদেশের মতো গোপালগঞ্জের ভূমিহীনদের জন্য ৭৮৭টি ঘর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচিত ও যাচাই-বাছাই করা ভূমি-গৃহহীনদের নামে এসব ঘরের দলিলও ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি ভূমিহীনদের হাতে দলিল তুলে দেওয়া হবে। গোপালগঞ্জ সদরে ৪৮০টি, কাশিয়ানীতে ২০০, মুকসুদপুরে ৫০, কোটালীপাড়ায় ৩০ ও টুঙ্গিপাড়ায় ২৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চলছে নিরাপদ খাবার পানি ও বিদু্যৎ লাইন নির্মাণের কাজ। সেটিও আগামী দু-এক দিনের মধ্যে শেষ হবে। জেলার মধুমতি নদীতীরে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি ভূমিতে অনেকটা সবুজের সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের এই গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবে রূপ নিয়েছে, গ্রাম হয়েছে শহর। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান, কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায়, মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের রাশেদ, কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘরগুলো যথাযথ মান বজায় রেখে স্থায়ী ও টেকসই মানের উন্নত মালামাল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সার্বক্ষণিক নজরদারি ও জেলা মনিটরিং টিমের সার্বক্ষণিক তদারকিতে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর দুই শতাংশ সরকারি জমির উপর এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট ওয়ালসেড ও পাকা ল্যাট্রিন, রান্নাঘরসহ নির্মাণ করা হয়। জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, 'প্রতিনিয়ত আশ্রয়ণ-২ নির্মাণ স্থলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ প্রকল্পের কাজ তদারকি করেছি। জেলা মনিটরিং টিমও নিয়মিত মনিটরিং করেছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলার ঘরগুলোও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে গোপালগঞ্জের ৭৮৭টি গৃহের কবুলিয়াত ভূমিহীনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরপর স্থায়ীভাবে এসব গৃহে বসবাস করতে পারবে তারা। পাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই, দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে অন্যের আশ্রয়ে বা পথেঘাটে পড়ে থাকা এসব ভূমিহীন মানুষের। রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ৭০টি আধাপাকা ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল করিম জানান, রাজারহাটে ১ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে ৭০টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, 'ক' শ্রেণির ভূমিহীন পরিবার ২ শতক জমির সঙ্গে টিনশেড আধাপাকা বাড়ি পাচ্ছেন। দ্রম্নত নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় গৃহহীনদের এইসব ঘর হস্তান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সুবিধাভোগীদের ঘরের চাবি, কবুলিয়ত দলিল, নামজারি খতিয়ান ও ডিসিআর প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে রাজারহাট ইউএনও নূরে তাসনিম বলেন, ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের বরাদ্দ আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ শেষ হওয়ায় ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণা দিলেই প্রত্যেক পরিবারের হাতে নির্মিত ঘরের চাবিসহ কাগজপত্র তুলে দেওয়া হবে। পূর্বধলা (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার পূর্বধলায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে ঘর পাচ্ছে ৫৩ গৃহহীন পরিবার। এসব ঘর নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, মুবিবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় পূর্বধলার ৬টি ইউনিয়নের সরকারি খাস জমিতে ৫৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বধলা সদর ইউনিয়নে ১৭টি, জারিয়ায় ৯টি, ধলামূলগাঁও ৭টি, খলিশাউড় ৭টি, বিশকাকুনী ১২টি ও নারান্দিয়া ইউনিয়নে ১টি ঘর রয়েছে। ৯টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও ৮টির কাজ চলমান আছে। ইউএনও উম্মে কুলসুম জানান, ৫৩টি ঘরের নির্মাণকাজ ৯৯ ভাগ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাকি কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে তালিকাসহ ঘর হস্তান্তরের সনদপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। মোলস্নাহাট (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের মোলস্নাহাটে ৩৫টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের চর-দারিয়ালা এলাকায় সদ্য পুনঃখননকৃত আঠারোবাকী নদীর পাড়ে নয়নাভিরাম পরিবেশে এসব গৃহ নির্মাণ করা হয়। সারিবদ্ধ ৩৫টি গৃহ নির্মাণ করায় এলাকার রূপ বদলে গেছে। দেখলে মনে হয় যেন উন্নত স্বপ্নপুরীসম কোনো এক ছোট শহর। সুফলভোগী দ্বিন মোহাম্মাদ ফকির জানান, তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে থাকতেন। নিজের নামে বাড়ি পেয়ে অত্যন্ত খুশি। আরেক উপকারভোগী স্বরূপজান বলেন, 'আমাদের কোনা জায়গা নেই, পরের জমিতে থাকতাম, এ বাড়ি পেয়ে খুশি হয়েছি।' উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুর রহমান সজল বলেন, এখানে খেলার মাঠ, রাস্তা ও ডিপ-টিউবওয়েলসহ আরও কিছু জরুরি কার্যক্রম শেখ হেলাল উদ্দীন এমপির ব্যক্তিগত সহযোগিতায় করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ইউএনও মাফ্‌ফারা তাসনীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদান কার্যক্রমে তিনিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক থাকায় এমন চমৎকার একটি পলস্নী বা আবাসন সম্পন্ন হয়েছে।