পাটকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন ফরিদপুরের কৃষকরা

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
ফরিদপুরের বিস্তীণর্ মাঠজুড়ে এখন শুধু চির সবুজের সমাহার। বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে ক্ষেতে লিকলিকে শরীরে বাড়তে থাকা পাট গাছগুলো। মাঠে মাঠে সোনালি অঁাশ পরিচযার্য় ব্যস্ত সময় পার করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। পাটের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুর জেলা। গুণে ও মানে দেশ সেরা এ জেলার পাট। তাই এ জেলার ব্রান্ডিং হিসেবে পাট সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে অনেক আগেই। ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, মধুখালী ও সালথা উপজেলার বিস্তীণর্ মাঠে কোমর ছাড়িয়ে বুক সমান উচ্চতায় বেড়ে উঠা পাট গাছগুলো সতেজতা ছড়াচ্ছে। এ যেন শ্যামল বাংলার অন্যরকম এক প্রাকৃতিক মুগ্ধতা। চলতি বছর এ জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সঠিক সময়ে পরিমাণ মতো বৃষ্টি এবং অনুক‚ল আবহাওয়ায় পাটের ফলন অন্য বছরগুলো তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। অনুক‚ল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে বাড়তে থাকা সবুজ পাট গাছগুলো সোনালি স্বপ্ন দেখাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। তাই তো স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা এবার আশা করছেন বাম্পার ফলন ও ন্যায্য দামের। ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৮৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার চাষিরা ৮৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে পাট আবাদ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাতির্ক চন্দ্র চক্রবতীর্ জানান, বতর্মান সরকার খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যে পরিবেশবান্ধব পাটের মোড়ক ব্যবহার করায় ঘুরে দঁাড়িয়েছে পাটের উৎপাদন ও বাজার দর। ফলে গত কয়েক বছর ধরে প্রান্তিক পযাের্য়র চাষিদের মধ্যেও পাট চাষের আগ্রহ বেড়েছে। তিনি বলেন, এ জেলার চাষিরা মূলত দুই জাতের পাট তোষা ও মেস্তা জাত আবাদ করে থাকে। এর মধ্যে তোষা জাতটি চাষিদের কাছে অধিক প্রিয়। বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি কমর্কতার্ কৃষিবিদ মোহায়মেন ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাট কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক একটি ফসল। কম খরচে ভালো ফলন হওয়ায় বতর্মানে কৃষকরা আবারও পাটচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটচাষের পরিমাণও বেড়েছে। এদিকে নগরকান্দা উপজেলার শশা গ্রামের পাটচাষি রফিক মোল্লা বলেন, একটা সময় পাটই ছিল আমাদের ভরসার ফসল। বাপ-চাচারা কত কষ্ট করে আমাদের সঙ্গে নিয়ে পাট চাষ করতেন। পানিতে ডুবে ডুবে জাগ দিতেন, ভালোভাবে পচলে তারপর মাচা পেতে অঁাশ ছড়াতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সবকিছু নাই হয়ে গেল। ইদানীং আবারও পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধিতে এ পাটচাষি বলেন, কত মায়া লাগে, চিকন গাছে কচি কচি পাতা। পাট গাছ তো আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গেই মিশে আছে। জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনালি অঁাশের কাক্সিক্ষত দাম নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও কাটার পর পচানোর জায়গা নিয়ে তেমন চিন্তা নেই। বৈশাখের শুরু থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ধারা বষার্ পযর্ন্ত অব্যাহত থাকায় এবারে পাট পচাতে পানি নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হবে না। এখন অপেক্ষা কেবল পাটগাছ থেকে অঁাশ ছাড়িয়ে তা বাজারে বিক্রি করা। সেখানে ন্যায্য দাম মিললেই কৃষকদের মুখে লেগে থাকা হাসিটা আরও রঙিন হবে। সীমানা ছাড়িয়ে যাবে সবুজ পাটগাছের সোনালি অঁাশ ঘিরে তাদের স্বপ্নের বিস্তৃতি। এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ফরিদপুর জেলা পাটের জন্য বিখ্যাত। এ কারণে জেলার ব্রান্ডিং পণ্য হিসেবে পাটকেই বেছে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার সেøাগান পাটকে নিয়েই ‘সোনালি অঁাশে ভরপুর, ভালোবাসী ফরিদপুর’।