পঞ্চগড় ও নাটোরে ভাইয়ের হাতে বড়াইগ্রামে বোনের হাতে ভাই খুন

তিন জেলায় শিশুসহ পাঁচ লাশ উদ্ধার

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
পঞ্চগড় ও নাটোরের গুরুদাসপুরে বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছোট ভাই। অন্যদিকে, নাটোরের বড়াইগ্রামে বোনের হাতে ভাই খুন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, ফরিদপুরের নগরকান্দায় গৃহবধূ, বাগেরহাটে শিশু, গাজীপুরের শ্রীপুরে কিশোর এবং শেরপুরের নকলায় ২ কিশোরীসহ মোট পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত- পঞ্চগড় :পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের ধারালো ছুরির আঘাতে বড় ভাই রবিউল আলম (৪২) নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর ছোট ভাই ফিরোজ হোসেন (৩২) পলাতক রয়েছেন। গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের লালগছ এলাকায় ঘটনা ঘটে। নিহত রবিউল ওই এলাকার সারাফত আলীর ছেলে। স্থানীয় ও পুলিশ জানায়, ফিরোজ গত কয়েকদিন আগে বাজার থেকে একটি ধারালো ছুরি কিনে আনেন। নিহত রবিউল পঞ্চগড় শহরের ইসলামবাগের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি তেঁতুলিয়ার লালগছ এলাকায় যান। পরে রাতে ছোট ভাই ফিরোজ জমিসংক্রান্ত বিরোধ টেনে ঘর থেকে ধারালো ছুরি বের করে রবিউলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। রবিউলের চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এলে ফিরোজ পালিয়ে যান। রবিউলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছায়েম মিয়া জানান, ফিরোজ পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। গুরুদাসপুর (নাটোর) :নাটোরের গুরুদাসপুরে পারিবারিক কলহের জেরে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পুরুলিয়া গ্রামের মৃত রওশন আলীর দুই ছেলে খালেক (৫৫) ও মালেক (৫০) বাড়ির ভেতরে টয়লেট স্থাপনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে বড় ভাই আব্দুল খালেককে কুপিয়ে জখম করেন ছোট ভাই আব্দুল মালেক ও ভাতিজা রাজ্জাক আলী। পরে স্থানীয়রা গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে জোড় তৎপরতা চলছে। বড়াইগ্রাম (নাটোর) : নাটোরের বড়াইগ্রামে বোন উম্মেহানির (৩২) লাঠির আঘাতে ভাই মনিরুল ইসলামের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় মনিরুল ইসলামের সৎবোন উম্মেহানি ও ভাই মানিক হোসেনকে (৪০) আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মনিরুল বড় ভাই মানিকের কাছে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধার পরিশোধ না করায় দ্বন্দ্বের জেরে মনিরুলের একটি ছাগল নিয়ে বেঁধে রাখেন মানিকের স্ত্রী শরিফা বেগম। এ নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে সৎবোন উম্মেহানি লাঠি দিয়ে মনিরুলের মাথায় আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে মৃতু্যবরণ করেন। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফরিদপুর :ফরিদপুরের নগরকান্দায় কহিনুর আক্তার (৪১) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই গৃহবধূ উপজেলার শশা গ্রামের লিটন মিয়ার স্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে বাড়ির পাশে পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, বিশ বছর আগে লিটন মিয়া ঢাকার উত্তরা এলাকার আব্দুল কাদের মিয়ার মেয়ে কহিনুর আক্তারকে বিয়ে করেন। বেশ কিছুদিন আগে লিটন সাতক্ষীরায় আরেকটি বিয়ে করলে তাদের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। লিটনের বড় ভাই মিজান মিয়া বলেন, ছোট ভাই বিটুর স্ত্রী সকালে পুকুর ঘাটে গিয়ে কহিনুরের লাশ পানিতে ভাসতে দেখেন। থানায় জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিহতের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, লিটন আরেকটি বিয়ে করার পর থেকে কহিনুরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। লিটন ও তার পরিবার কহিনুরকে খুন করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নগরকান্দা থানার ওসি সেলিম রেজা বিপস্নব জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এটা হত্যা না দুর্ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাগেরহাট :বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের পানগুছি নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ শিশু সাবিনা আক্তারের (৭) লাশ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজের ২৮ ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নদীতে লাশ ভেসে ওঠে। আগের দিন সোমবার দুপুরে নদীতে গোসল করতে গিয়ে সে ডুবে যায়। সাবিনা উপজেলার বারইখালী এলাকার পুরাতন থানাসংলগ্ন শাহ জালাল শেখের মেয়ে। সাবিনার চাচা কবির আহম্মেদ জানান, সোমবার পরিবারের সদস্যরা পানগুছি নদীতে গোসল করছিলেন। সাবিনাকে গোসল করিয়ে কিনারে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় সে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার নদীতে ঝাঁপ দেয়। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি। মোরেলগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। শ্রীপুর (গাজীপুর) :গাজীপুরের শ্রীপুরে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় হুমায়ুন কবির (১৭) নামে এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে পৌর এলাকার সবুজবাগ গ্রামের হাবিবুর রহমানের বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত হুমায়ুন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দনিয়াকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে। সে ওই বাড়িতে ভাড়া থেকে একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। নিহতের বড় ভাই লোকমান হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তাকে ডাকাডাকি করেও কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে পাশের রুম দিয়ে প্রবেশ করে তার ঝুলন্ত লাশ দেখে থানায় খবর দেওয়া হয়। শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক সাদেকুর রহমান যায়যায়দিনকে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নকলা (শেরপুর) :শেরপুরের নকলায় পৃথক ঘটনায় দুই কিশোরীর মৃতু্য হয়েছে। উপজেলা ধনাকুশা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আলেয়া নামের ৭ বছরের কিশোরী ও উপজেলার কবুতরমাড়ি এলাকা থেকে মিম নামের ১৩ বছর বয়সি আরেক কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা যায়, বুধবার দুপুরে নকলা-নালিতাবাড়ী সড়কের ধনাকুশা নতুন বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে আলেয়া। ঘাতক ট্রাক ও চালককে আটক করেছে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, ট্রাকটি দ্রম্নতবেগে যাওয়ার সময় ওই কিশোরীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃতু্য হয়। এদিকে, একই দিন দুপুরে উপজেলার কবুতরমাড়ি এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে মিমের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, সবার অগোচরে সকালে নিজ কক্ষের ধন্যার সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে মিম। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। সে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তবে মৃতু্যর কারণ এখনো জানা যায়নি।