করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যাহত

লকডাউনেও উপেক্ষিত সরকারি বিধিনিষেধ

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেও বিভিন্ন স্থানে তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসন তৎপর থাকলেও থেমে নেই জনসমাগম। কোনো বিধি-নিষেধ না মেনে বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের মতো চলাফেরা ও বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ীরা। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা মাস্কও ব্যবহার করছেন না জনসাধারণ। এতে করে মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজন ছাড়াই ভিড় করছেন মানুষজন। এছাড়াও কিছু স্থানে মাইকিং করে জনসমাগম করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। লকডাউনে বিভিন্ন স্থানের চিত্র তুলে ধরে আমাদের আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে পড়েছে হাট-বাজার। রিকশা, ইজিবাইক, মানুষ আর মোটরসাইকেলে ভরপুর। এ দোকানে সে দোকানে ঘোরাঘুরি করছে সবাই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পা দেওয়ায় সারা দেশে লকডাউন চলছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শুরু হওয়া সাপ্তাহিক হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। গা ঘেঁষে ঠেলাঠেলি করে চলছে দ্রব্যাদি কেনাকাটা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ভোরের বাজার চালু রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে মানুষের সংখ্যা কমে যায়। শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অনেকেই মানছেন না। আর অনেকেই বলছেন, ক্রয়-বিক্রয়ে অল্প সময় পাওয়ায় ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেকেই বাজারটিকে ঈদের বাজারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সরেজমিন বালিয়াকান্দি বাজারে দেখা যায়, গোটা বাজারে মানুষ আর মানুষ। গায়ে গায়ে ঠেলাঠেলি করে চলছেন তারা। মানুষ যে যার মতো কেনাকাটায় ব্যস্ত। একজন ব্যবসায়ী বলছেন, সম্প্রতি বাজার বন্ধ ঘোষণা দেওয়ায় যতটুকু সময় খোলা পায় তাতে ভিড় লেগে যায়। বাজারে যে ভিড় লেগেছিল তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো সুযোগ ছিল না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মহামারি আকারে দেখা দিলে তারা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বাজারের সময় সংক্ষিপ্ত ঘোষণা করেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুরোধ জানান। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় সরকারের দেওয়া বিধি মেনে চলার উপর জোর তাগিদ দেন। কাঁচা বাজারের দোকান, আড়ৎ খোলা থাকায় প্রচুর ভিড় হয়েছে। ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় করোনার মধ্যে মাইকিং করে এবং বাড়ি বাড়ি গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে জনসমাগম করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী অশোক কুমার ঘোষ প্রনোর বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ওই ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে কয়েক শতাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকা থেকে সরকারি চাল উদ্ধারের ঘটনায় চেয়ারম্যান নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে মাইকিং করে সুফলভোগী কার্ডধারীদের ডেকে এনে জনসমাগম করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরে নয়টি ওয়ার্ডের তিনশত ২৬ জন কার্ডধারী সুফলভোগীসহ প্রায় পাঁচশত নারী-পুরুষ সেখানে সমবেত হয়েছেন। সেখানে ছিল না কোনো সামাজিক দূরত্ব। আবার অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। হাট উধুনিয়া, বেতুয়ান, পাটুল ও কাজীটোল গ্রাম থেকে আসা কার্ডধারী সুফলভোগীরা বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান তাদের বাড়িতে চৌকিদার পাঠিয়ে সবাইকে কার্ড সঙ্গে করে সকাল ৯টার মধ্যে পরিষদে আসতে বলেছেন, তাই এসেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী অশোক কুমার ঘোষ প্রনো বলেন, 'তদন্ত কমিটির আসার কথা তাই কার্ডধারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষদে আসতে বলেছি।' তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও এসিল্যান্ড কাওছার হাবীব বলেন, 'তদন্তের বিষয়ে সেখানে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই অনেক লোকের সমাগম দেখতে পেয়ে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।' এ ব্যাপারে ইউএনও সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে কেউ যদি জনসমাগম করে তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউনিয়া (রংপুর) : রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা প্রশাসন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তৎপর থাকলেও থেমে নেই জনসমাগম। কোনো বিধি-নিষেধ না মেনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের মতো চলাফেরা ও বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ীরা। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা মাস্কও ব্যবহার করছে না জনসাধারণ। সরেজমিনে হারাগাছ হকবাজার, মেনাজবাজার, বুকলতলা, মীরবাগ বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্বতো দূরের কথা, হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব না মেনে ঝুঁকি নিয়ে মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে চলাফেরা করছেন অনেকেই। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান ও কনফেকশনারীসহ বিভিন্ন দোকানগুলোতে চলছে আড্ডা। যেখানে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ একজনেই করতে পারবেন, সেখানে চার থেকে পাঁচজন করে এসেছেন কেনাকাটা করতে। এদিকে গত সোমবার থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ইউএনও এবং এসিল্যান্ড করোনা প্রতিরাধে মানুষদের সচেতন করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। কিন্তু প্রশাসনের এমন তৎপরতার পরও হাট-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্ব অনেকেই মানছেন না। এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদি হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। বোয়ালমারী (ফরিদপুর): ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মানা হচ্ছে না লকডাউন। উপজেলাজুড়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানার চিত্র চোখে পড়ার মতো। পবিত্র রমজানের আগে লকডাউন দেওয়ায় বিরক্ত উপজেলাবাসী। করোনা পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা মানছেন না তারা। চলছে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান। জনসমাগমের কারণে কিছু সড়কে দেখা গেছে যানজটও। বৃহস্পতিবার শহরের বাজার, চৌরাস্তা, স্টেশন রোড, ওয়াপদা মোড়, কাঁচাবাজারসহ সর্বত্র একই চিত্র দেখা গেছে। লকডাউনের মধ্যে পৌরশহরের এমন চিত্র দেখে লকডাউন মেনে চলা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় সোনালী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংকের ভিতরে প্রচন্ড ভিড়। গ্রাহকরা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। এ সময় টাকা জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জনৈক গ্রাহক বলেন, ব্যাংক লেনদেনের সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ায় এত ভিড় হয়েছে। ব্যাংক লেনদেনের সময়সীমা স্বাভাবিক থাকলে এত ভিড় হতো না। বর্তমান পরিস্থিতিতেই করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।' পৌরশহরের এক চায়ের দোকানদার ইস্রাফিল মোল্যা বলেন, 'চা বিক্রি করে সংসার চালাই। দোকান বন্ধ থাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করার জন্য লকডাউনের প্রথম দুই দিন শ্রমিক হাটে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু কাজ পেলাম না।' লকডাউন দেওয়ায় বিরক্ত ভ্যানচালক সাহাদাৎ হোসেন বলেন, 'রমজানের আগে এভাবে লকডাউন দিলে আমরা খাব কি চালের কেজি ৬০ টাকা, সর্ষের তেলের কেজি ১৭০ টাকা। ভ্যান চালিয়ে দিন আনা দিন খাওয়া আমাদের।' এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহাদুল আখতার তপন বলেন, 'সবাই লকডাউন মানছে না। এভাবে চললে লকডাউন দিয়ে সুফল পাওয়া যাবে না।'