বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল যেন অকেজো যন্ত্রপাতির ভাগাড়

নামে ২৫০ শয্যা হলেও সেবা ১০০ শয্যারই
মো. নুরুল হক কবির, হবিগঞ্জ
  ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের জন্য একটি আইসিইউ বেড, ডায়ালাইসিস ও ভেন্টিলেটর মেশিন বরাদ্দ এনেছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। মোস্তফা শহীদ কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি নিয়মিত হবিগঞ্জে এসে চিকিৎসা নিতেন।

মোস্তফা শহীদ ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রম্নয়ারি মারা যান। তার চিকিৎসার জন্য এখানে কর্মরত বারডেম থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকরাও বদলি হয়ে চলে যান। আর আইসিইউ বেড ও ডায়ালাইসিস মেশিন দিয়ে দেওয়া হয় হবিগঞ্জের ডায়াবেটিক হাসপাতালকে। কিন্তু ভেন্টিলেটর মেশিন আর মনিটরটি থেকে যায় সদর হাসপাতালে ২য় তলায় অপারেশন থিয়েটারের সঙ্গে থাকা ভায়া কক্ষে।

এরপর থেকে আজ পর্যন্ত মেশিনটি ব্যবহার করা হয়নি। অনেকে জানতেনই না হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভেন্টিলেটর মেশিন আছে। অযত্নে থেকে মেশিনটিতে ধুলোবালি জমে গেছে। অথচ করোনাকালে এই ভেন্টিলেশন মেশিনের সংকট নিয়ে আলোচনা ছিল দেশজুড়ে। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে অনেক নষ্ট যন্ত্রপাতি। পুরনো বিল্ডিংয়ের অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন কক্ষে তিনটি বিশাল স্টেরিলাইজ মেশিন ও এর যন্ত্রপাতি পড়ে আছে অবহেলায়। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই জানান, মেশিনগুলো কোনোদিনই ব্যবহার করতে দেখেননি তারা। এই ভবনে নিচে স্টোরকিপারের কক্ষের সঙ্গেই বাক্সবন্দি বিশাল একটি জেনারেটর। এটিও চালু করা হয়নি।

এদিকে, ২৫০ শয্যা ভবনের নিচতলায় ৬ মাস আগে আসা ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি এখনো চালু হয়নি। নেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনও। ওই ভবনের ৭ম ও ৮ম তলা এখনো চালু করা হয়নি। ভবনে লিফট ফিটিং করা হলেও এখনো চালু হয়নি। হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসা রেগীদের পুরনো মেশিনে কিছু পরীক্ষা করা হলেও অধিকাংশ পরীক্ষার জন্যই বাইরে যেতে হয়। হাসপাতালে সম্প্রতি দুটি পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিন দুটি অপারেশন থিয়েটারে বসানোর কথা বললেও পুরো অপারেশন থিয়েটার ঘুরেও সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মোমিন উদ্দিন চৌধুরী যায়যায়দিনকে জানান, দুটি পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিন এসেছে। সেগুলো অপারেশন থিয়েটারে ইনস্টল করা হয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে সাময়িক ব্যাকআপ দেওয়া যাবে। প্রয়োজনে সেগুলো করোনা ওয়ার্ডে নিয়ে রোগীদের সাপোর্ট দেওয়া যাবে। বৈদু্যতিক লাইনের সমস্যার কারণে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি চালু করা যাচ্ছে না। লিফট ও জেনারেটরও চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন অকেজো থাকা ভেন্টিলেটর মেশিনটিও পরীক্ষা করা হবে।

এদিকে, ২০১৬ সালের ২০ জুলাই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন করলেও জনবলসহ অন্য বিষয় এখনো অনুমোদন হয়নি। ফলে এখনো হবিগঞ্জবাসী ১০০ শয্যা হাসপাতালেরই সুবিধা পাচ্ছেন। হবিগঞ্জ জেলাসহ কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪০০ রোগী ভর্তি হয়। রোগীদের অধিকাংশই দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত হওয়ায় তাদের একমাত্র ভরসা এ হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসক সংকটসহ যন্ত্রপাতির অভাবে এখানে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই সামান্য সমস্যা নিয়ে এখানে আসা রোগীদের ঢাকা-সিলেটে পাঠাতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে